পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

न६भ সংখ্যা। ] জ্ঞানে, কৰ্ম্মে ও প্রেমে শাস্তকে, শিবকে ও অদ্বৈতকে উপলব্ধি করিবার একটি পর্য্যায় উপনিষদের শান্তং শিবমদ্বৈতম্ মন্ত্রে কেমন নিগুঢ়ভাবে নিহিত আছে, তাহাই আলোচনা করিয়া দেখ । প্রথমে শাস্তম্। আরম্ভেই জগতের বিচিত্রশক্তি মানুষের চোখে পড়ে। যতক্ষণ শান্তিতে তাহার পর্য্যাপ্তি দেখিতে না পাই, ততক্ষণ পৰ্য্যন্ত কত ভয়, কত সংশয়, কত অমুলক কল্পনা । সকল শক্তির মূলে যখন অমোঘ নিয়মের মধ্যে দেখিতে পাই শান্তং, তখন আমাদের কল্পনা শান্তি পায়। শক্তির মধ্যে তিনি নিয়মস্বরূপ, তিনি শাস্তম্। মানুষ আপন অন্তঃকরণের মধ্যেও প্রবৃত্তিরূপিণী অনেকগুলি শক্তি লইয়া সংসারে প্রবেশ করে ; যতক্ষণ তাহদের উপর কর্তৃত্বলাভ না করিতে পারে, ততক্ষণ পদে পদে বিপদ, ততক্ষণ দুঃখের সীমা নাই। অতএব এই সমস্ত শক্তিকে শাস্তির মধ্যে সংবরণ করিয়া আনাই মানুষের জীবনের সর্বপ্রথম কাজ। এই সাধনায় যখন সিদ্ধ হইব, তখন জলে-স্থলে-আকাশে সেই শান্তস্বরূপকে দেখিব, যিনি জগতের ংখ্য শক্তিকে নিয়মিত করিয়া অনাদিঅনন্তকাল স্থির হইয়া আছেন। এইজন্য আমাদের জীবনের প্রথম আশ্রম ব্রহ্মচৰ্য্য— শক্তির মধ্যে শান্তিলাভের সাধন। পরে শিবম্। সংযমের দ্বারা শক্তিকে আয়ত্ত করিতে পারিলেই তবে কৰ্ম্ম করা সহজ হয়। এইরূপে কৰ্ম্ম যখন আরম্ভ করি, তখন নানা লোকের সঙ্গে নানা সম্বন্ধে জড়াইয় পড়িতে হয়। এই আত্মপরের সংস্রবেই যত ভালমন্দ, যত পাপপুণ্য, যত আঘাতপ্রতিঘাত । भांख्१ विमरैवखम् । 8ՋԳ ংবরণ করিয়া তাহদের বিরোধভঞ্জন করিয়া দেয়—তেমনি সংসারে আত্মপরের শতসহস্ৰ সম্বন্ধের অপরিসীম জটিলতার মধ্যে কে সামঞ্জস্য স্থাপন করে ? মঙ্গল । শান্তি না থাকিলে জগৎপ্রকৃতির প্রলয়, মঙ্গল নী থাকিলে মানবসমাজের ধ্বংস। শাস্তকে শক্তিসঙ্কুল জগতে উপলব্ধি করিতে হইবে, শিবকে সম্বন্ধসস্কুল সংসারে উপলব্ধি করিতে হইবে। র্তাহার শান্তস্বরূপকে জ্ঞানের দ্বারা ও র্তাহার শিবস্বরূপকে শুভকৰ্ম্মের দ্বারা মনে ধারণা করিতে হইবে। আমাদের শাস্ত্রে বিধান আছে, প্রথমে ব্ৰহ্মচৰ্য্য, পরে গার্হস্থ্য,—প্রথমে শিক্ষার দ্বারা প্রস্তুত হওয়া, পরে কর্মের দ্বারা পরিপক্ক হওয়া । প্রথমে শাস্তং, পরে শিবম্। তার পরে অদ্বৈতম্। এইখানেই সমাপ্তি। শিক্ষাতেও সমাপ্তি নয়, কয়েও সমাপ্তি নয়। কেনই বা শিখিব, কেনই বা খাটিব ? একটা কোথাও ত তাহার পরিণাম আছে। - সেই পরিণাম অদ্বৈতম্। তাহাই নিরবচ্ছিন্ন প্রেম, তাহাই নিৰ্ব্বিকার আনন্দ। মঙ্গলকৰ্ম্মের সাধনায় যখন কৰ্ম্মের বন্ধন ক্ষয় হইয়া য়ায়, অহঙ্কারের তীব্রতা নষ্ট হইয়া আসে, যখন আত্মপরের সমস্ত সম্বন্ধের বিরোধ ঘুচিয়া যায়, তখনই নম্রতাদ্বারা, ক্ষমুর, দ্বারা, করুণার দ্বারা প্রেমের পথ প্রস্তুত হইয় আসে। তখন অদ্বৈতম্। তখন সমস্ত সাধনার সিদ্ধি, সমস্ত কর্মের অবসান। তখন মানবজীবন তাহার প্রারম্ভ হইতে পরিণাম পর্যন্ত পরিপূর্ণ – কোথাও সে আর অসঙ্গত, অসমাপ্ত, অর্থহীন নহে । হে পরমাত্মন, মানবজীবনের সকল ।