পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. নবম সংখ্যা । ] সৌন্দৰ্য্যবোধ । 8 වද ইহ দেখা গেছে, বৰ্ব্বরজাতি যাহাকে ' সুন্দর বলিয়া আদর করে, সভ্যজাতি তাহাকে দূরে ফেলিয়া দেয়। ইহার প্রধান কারণ, বৰ্ব্বরের মন যেটুকু ক্ষেত্রের মধ্যে আছে, সভালোকের মন সেটুকু ক্ষেত্রের মধ্যে নাই। ভিতরে ও বাহিরে, দেশে ও কালে সভ্যজাতির জগৎটাই যে বড় এবং তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অত্যন্ত বিচিত্র। এইজন্যই বৰ্ব্বরের জগতে ও সভ্যের জগতে বস্তুর মাপ এবং ওজন এক হইতেই পারে না । ছবিসম্বন্ধে যে ব্যক্তি আনাছি, সে একটা পটের উপরে খুব খানিকটা রংচং বা গোলগাল আরুতি দেখিলেই খুসি হইয়া উঠে । ছবিকে সে বড় ক্ষেত্রে রাথিয়া দেখিতেছে না । এখানে তাহার ইন্দ্রিয়ের রাশ টানিয়া ধরিবে, এমন কোন উচ্চতর চিারবুদ্ধি নাই। গোড়াতেই যাহা তাহাকে আহ্বান করে, তাহারই কাছে সে আপনাকে ধরা দিয়া বসে। রাজবাড়ীর দেউড়ির দরোয়ানজির চাপরাস ও চাপদাড়ি দেখিয়া তাহাকেই সৰ্ব্বপ্রধান ব্যক্তি মনে করিয়া সে অভিভূত হইয়া পড়ে, দেউড়ি পার হইয়া সভায় যাইবার কোনো প্রয়োজন সে অনুভব করিতেই পারে না । কিন্তু মে লোক এত বড় গ্ৰাম্য নহে, সে এত সহজে ভোলে ন্যু সে জানে, দারায়ানের মহিমাটা হঠাৎ খুব বেশি করিয়া চোখে পড়ে বটে, কারণ চোখে পড়ার বেশি মহিমা যে তাহার নাই । রাজার মহিমা কেবলমাত্র চোখে পড়িবার বিষয় নহে, তাহাকে মন দিয়াও দেখিতে হয়। এইজন্য রাজার মহিমার মধ্যে একটা শক্তি আছে, গাম্ভীয্য আছে। অতএব যে ব্যক্তি সমজ দার, ছবিতে সে একটা রংচঙের ঘটা দেখিলেই অভিভূত হইয়া পড়ে না। সে মুখের সঙ্গে গোঁণের, মাঝখানের সঙ্গে চারিপাশের, সমুখের সঙ্গে পিছনের একটা সামঞ্জস্য খুজিতে থাকে। রংচঙে চোখ ধরা পড়ে, কিন্তু সামঞ্জস্তের সুষমা দেখিতে মনের প্রয়োজন । তাহাকে গভীরভাবে দেখিতে হয়, এইজন্য তাহার আনন্দ গভীরতর। এই কারণে অনেক গুণী দেখা যায়,— বাহিরের ক্ষুদ্র লালিত্যকে যাহারা আমল দিতে চান না ; তাঁহাদের সষ্টির মধ্যে যেন একটা কঠোরতা আছে । তাহাদের ধ্রুপদের মধ্যে থেয়ালের তান নাই। হঠাৎ তাহার বাহিরের রিক্ততা দেখিয়া ইতর লোকে তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতে চাহে ; অথচ সেই নিৰ্ম্মল রিক্ততার গভীরতর ঐশ্বযইি বিশিষ্ট্রলোকের চিত্তকে বৃহৎ আনন্দ দান করে। তবেই দেখা যাইতেছে, শুধু চোখের দৃষ্টি নহে, তাহার পিছনে মনের দৃষ্টি যোগ না দিলে সৌন্দর্য্যকে বড় করিয়া দেখা যায়ু না। এই মনের দৃষ্টি লাভ করা বিশেষ শিক্ষার কৰ্ম্ম । মনেরও আবার অনেক স্তর আছে। কেবল বুদ্ধিবিচার দিয়া আমরা যতটুকু দেখিতে পাই, তাহার সঙ্গে হৃদয়ভােব যোগ দিলে ক্ষেত্র আরো বাড়িয়া যায়-ধৰ্ম্মবুদ্ধি যোগ দিলে আরো অনেকদূর চোখে পড়ে, অধ্যাত্মবৃষ্টি খুলিয়া গেলে দৃষ্টিক্ষেত্রের আর সীমা পাওয়া যায় না। . ' অতএব যে দেথাতে আমাদের মনের বড় অংশ অধিকার করে, সেই দেখাতেই আমরা বেশি তৃপ্তি পাই। ফুলের সৌন্দয্যের চেয়ে ।