8૭ বড় হুইয়া উঠে। তাহার অসংযত প্রবৃত্তি, তাহার দানদক্ষিণা-পানভোজনের অতিমাত্র লোভ যজ্ঞের উদার মাধুর্য্যকে ভাল করিয়া দেখিতে দেয় না। শাস্ত্রে বলে, শক্তস্ত ভূষণং ক্ষম । ক্ষমাই শক্তিমানের ভূষণ। কিন্তু ক্ষমাপ্রকাশের মধ্যেই শক্তির সৌন্দর্য্য-অনুভব ত সকলের কৰ্ম্ম নহে। বরঞ্চ সাধারণ মূঢ়লোকেরা শক্তির উপদ্রব দেখিলেই তাহার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ করে। লজ্জা স্ত্রীলোকের ভূষণ। কিন্তু সাজসজ্জার চেয়ে এই লজ্জার সৌন্দৰ্য্য কে দেখিতে পায় ? যে ব্যক্তি সৌন্দৰ্য্যকে সঙ্কীর্ণ করির দেখে না । সঙ্কীর্ণ প্রকাশের তরঙ্গভঙ্গ যখন বিস্তীর্ণ প্রকাশের মধ্যে শান্ত হইয়া গেছে, তখন সেই বড় সৌন্দৰ্য্যকে দেখিতে -হইলে উচ্চভূমি হইতে প্রশস্তভাবে দেখা চাই। তেমন করিয়া দেখু জ’ মানুষের শিক্ষা চাই, গাম্ভীৰ্য চাই, অস্তরের, চাই। আমাদের দেশের প্রাচীন কবির"গর্ভিণী নারীর সৌন্দৰ্য্যবর্ণনায় কোথাও কুষ্ঠাপ্রকাশ করেন নাই যুরোপের কবি এখানে একটা লজ্জা ও দীনতা বোধ করেন। বস্তুত গর্ভিণী রমণীর যে কাস্তি, সেটাতে চোখের উৎসব তেমন নাই। নারীত্বের চরম সার্থকতালাভ যখন আসন্ন হইয়া আসে, তখন , তাহারই প্রতীক্ষা নারীমূৰ্ত্তিকে গৌরবে ভরয়া তোলে। এই দৃষ্ঠে চোখের বিলাসে যেটুকু কম পড়ে, মনের ভক্তিতে তাহার চেয়ে অনেক বেশি পূরণ করিয়া দেয়। সমস্ত বৃষ্টি ঝরিয়া-পড়িয়া শরতের যে হাল্কা মেঘ বিনা কারণে গায়ে হাওয়া লাগাইয়া উড়িয়া বেড়ায়, তাহার উপরে যখন অস্তস্বয্যের আলো পড়ে, তখন शत्रन*वि । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, পৌষ । রঙের ছটায় চোখ ধাদিয়া যায়। কিন্তু আষাঢ়ের যে নূতন ঘন মেঘ পয়স্বিনী কালে গাতীটির মত আসন্ন বৃষ্টির তীরে একেবারে মন্থর হইয়া পড়িয়াছে ; যাহার পুঞ্জ-পুঞ্জ সজলতার মধ্যে বর্ণবৈচিত্র্যের চাপল্য কোথাও নাই, সে আমাদের মনকে চারিদিক্ হইতে এমন করিয়া ঘনাইয়া ধরে যে, কোথাও যেন কিছু ফাক রাখে না। ধরণীর তাপশাস্তি, শস্ত্য 'ক্ষেত্রের দৈন্তনিবৃত্তি, নদীসরোবরের কুশতামোচ নের উদার আশ্বাস তাহার স্নিগ্ধ নীলিমার মধ্যে যে মাখানে ; দু-মঙ্গলময় পরিপূর্ণতার গম্ভীর মাধুষে সে স্তব্ধ হইয়া থাকে। কালিদাস ত বসন্তের বাতাসকে বিরহী যক্ষের দৌত্যকায্যে নিযুক্ত করিতে পারিতেন। এ কাযে তাহার হাতযশ আছে বলিয়া লোকে রটনা করে ; বিশেষত উত্তরে .যাইতে হইলে দক্ষিণাবাতাসকে কিছুমাত্র উজানে যাইতে হইত না । কিন্তু কবি প্রথম-আষাঢ়ের নূতন মেঘকেই পছন্দ করিলেন সে যে জগতের তাপ নিবারণ করে-সে কি শুধু প্রণয়ীর বার্তা প্রণয়িনীর কানের কাছে প্রলপিত করিবে ? সে যে সমস্ত পথটার নদী-গিরি কাননের উপর বিচিত্র পূর্ণতার সঞ্চার করিতে করিতে যাইবে । কদম্ব ফুটিবে, জম্বুকুঞ্জ ভরিয়া উঠিবে, বলাক উড়িয়া চলিবে, ভরা নদীর জল ছলছল, করিয়া তাহার কুলের বেত্রবনে আসিয়া ঠেকিবে, এবং জনপদবধুর ক্ৰবিলাসহীন প্রতিষ্কিন্ধলোচনের দৃষ্টিপাতে আষাঢ়ের আকাশ যেন আরো জুড়াইয়া যাইবে। বিরহীর বার্তাপ্রেরণকে সমস্ত পৃথিবীর মঙ্গল ব্যাপারের সঙ্গে পদে পদে গাঁথিয়া-গাথির তবে । কবির সৌন্দৰরিসরপিপাস্ক চিত্ত তৃপ্তিলাভ করিয়াছে ।