পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম সংখ্যা । ]

  • কিন্তু ভাবের প্রকাশ একেবারে প্রত্যক্ষপ্রকাশ। সুন্দর যাহা, তাহা সুন্দর। বিরাটু যাহা, তাহা মহান । রুদ্র যাহা, তাহা ভয়ঙ্কর । জগতের যাহা রস, তাহ একেবারে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিতেছে এবং আমাদের হৃদয়ের রসকে যাহিরে টানিয়া আনিতেছে। এই মিলনের মধ্যে লুকোচুরি- যতই থাকৃ, বাধাবিঘ্ন যতই ঘটুকু, তবু প্রকাশ ছাড়া এবং মিলন ছাড়া ইহার মধ্যে আর কিছুই খুজিয়া

পাওয়া যায় না । 像 聯 • তবেই দেখিতেছি, জগৎসংসারে ও মানবসংসারে একটা সাদৃশু আছে। ঈশ্বরের সত্যরূপ-জ্ঞানরূপ জগতের নানা কাজে প্রকাশ পাইতেছে, আর তাহার আনন্দরূপ জগতের নানা রসে প্রত্যক্ষ হইতেছে ।, কাজের মধ্যে তাহার জ্ঞানকে আয়ত্ত করা শক্ত—রসের মধ্যে তাহার আনন্দকে अश्डैन করায় জটিলতা নাই। কারণ, রসের মধ্যে তিনি যে নিজেকে প্রকাশই করিতেছেন । মানুষের সংসারেও আমাদের জ্ঞানশক্তি কাজ করিতেছে, আমাদের আনন্দশক্তি রসের সৃষ্টি করিয়া চলিতেছে। কাজের মধ্যে আমাদের আত্মরক্ষার শক্তি, আর রসের মধ্যে আমাদের আত্মপ্রকাশের শক্তি। আত্মরক্ষা আমাদের পক্ষে প্রয়োজনীয়, আর আত্মপ্রকাশ আমাদের প্রয়োজনের বেশি। প্রয়োজনে প্রকাশকে এবং প্রকাশে প্রয়োজনকে বাধা দেয়, যুদ্ধের উদাহরণে তাহা দেখাইয়tছ। স্বাৰ্থ বাজে-খরচ করিতে চায় ना, অথচ বাজে-খরচেই আনন্দ আত্মপরিচয় •দেয়। এইজন্তই স্বার্থের ক্ষেত্রে, আপিসে আঁমাদের আত্মপ্রকাশ যতই অল্প হয়, ততই বিশ্বসাহিত্য । 8>侵 তাহা শ্রদ্ধেয় হইয়া থাকে, - এবং এইজন্তই আনন্দের উৎসবে স্বার্থকে যতই বিস্তৃত হইতে দেখি, উৎসব ততই উজ্জল হইতে থাকে। তাই সাহিত্যে মানুষের আত্মপ্রকাশে কোনো বাধা নাই । স্বার্থ সেখান হইতে দূরে। দুঃখ সেখানে আমাদের হৃদয়ের উপর চোখের জলের বাষ্প স্বজন করে, কিন্তু আমাদের সংসারের উপর হস্তক্ষেপ করে না ; ভয় আমাদের হৃদয়কে দৌল দিতে থাকে, কিন্তু আমাদের শরীরকে আঘাত করে না ; সুখ আমাদের হৃদয়ে পুলকম্পর্শ সঞ্চার কৃরে, কিন্তু আমাদের লোভকে নাড়া দিয়া অত্যন্ত জাগাইয়া তোলে না 7 এইরূপে মানুষ আপনার প্রয়োজনের সংসারের ঠিক পাশেপাশেষ্ট একটা প্রয়োজন-ছাড়া সাহিত্যের সংসার রচনা করিয়া চলিয়াছে, সেখানে সে নিজের বাস্তব কোনো ক্ষতি না করিয়া নানা রসের দ্বারা আপনার প্রকৃতিকে নানারাপে অনুভব করিবার আনন্দ পায়,-আপনার প্রকাশকে বাধাহীন করিয়া দেখে। সেখানে দায় নাই, সেখানে খুসি। সেখানে পেয়াদবরকন্দাজ নাই, সেখানে স্বয়ং মহারাজা । এইজন্ত সাহিত্যে আমরা কিসের পরিচয় পাই ? না, মানুষেয় যাহ, প্রাচুর্য্য, মাহ ঐশ্বৰ্য্য, যাহা তাহার সমস্ত প্রয়োজনকে ছাপাইয়া উঠিয়াছে। যাহা তাহার সংসারের মধ্যেই ফুরাইয়া যাইতে পারে নাই।, এইজন্যই, ইতিমধ্যে আমার একটি প্রবন্ধে লিখিয়াছি, ভোজনরস যদি-চ পৃথিবীতে ছোট ছেলে হইতে বুড়া পৰ্য্যন্ত সকলেরই কাছে সুপরিচিত, তবু সাহিত্যে তাহা প্রহসন ছাড়া অন্যত্র তেমন করিয়া স্থান পায় নাই। কারণ,