পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম সংখ্যা । ]

  • ৯৯মাইল আরো উত্তরে, দিল্লিনগরের ভীষণ প্রাকারের পশ্চাদ্ভাগে, মোগল বাদশাদিগের আর একটি প্রাসাদ ; উহা বিভবমহিমায় আগ্রার প্রাসাদকেও অতিক্রম করে ।

বড়-বড়-ছু চাল-খিলান-সমন্বিত দিল্লির এই প্রাসাদটি একটা অদৃষ্ঠ পুরাতন উদ্যানের মধ্যে অধিষ্ঠিত ; চারিদিক্ রুদ্ধ ; উহার দস্তুর অত্যুচ্চ প্রাকারাবলী দর্শকের মনে বিষাদময় ঘোর কারাগারের ভাব আনিয়া দেয় । কিন্তু উহা যে-সে,কারাগার লহে—উহ দৈত্যদানবের কিংবা পরীদিগের কারাগার ; সুকুমার শিল্পগরিমায় কোন মানবপ্রাসাদ উহার সমকক্ষ হইতে পারে না । বলা বাহুল্য, উহারও সমস্তই ধবল মাৰ্ব্বেলে নিৰ্ম্মিত ; সমস্তই খুদিয়া বাহির-করা ;–গুমুজের প্রকাণ্ড ভিতর পিঠ প্রস্তরণের মসলায়. নিৰ্ম্মিত। কিন্তু ইহার এই স্থায়ী ধবলতার সহিত সোনার রং প্রচুরপরিমাণে মিশিয়াছে। মাৰ্ব্বেলের চেক্‌নাই-এর উপর সোনার কাজ বসাইলে তাহার যে একটা বিশেষ ‘থোলতাই হয়, তাহা সকলেই জানে। দেয়ালের ও গম্বুজ্বের ভিতর-পিঠে যে সব অগণ্য লতাপাতার অতি স্বল্প কাজ খুদিয়া বাহির করা হইয়াছে, তাহা স্বর্ণ দিয়া রঞ্জিত । দেয়ালের যে-সকল বড়-বড় ফুকর দিয়া বিষয় উদ্যানটি দেখা যায়, শুধু সেই সকল ফুকরের মধ্য-দিয়াই যাহা-কিছু আলো ভিতরে প্রবেশ করে। স্তম্ভশ্রেণী ও খাজ-কাটা খিলান-একটার-পর-একটা সারি-সারি বরাবর দূর প্রাস্তের আর্দ্ধচ্ছায়াচ্ছন্ন নীলিমার গর্তে বিলীন হইয়াছে, কিন্তু সমস্ত বারাণসী-অভিমুখে । (t:శ్రీ প্রাসাদটিতে ধবল-প্রস্তরের শুভ্র স্বচ্ছত পূর্ণ ভাবে বিরাজমান । যে দালানে সিংহাসন ছিল (সেই জনশ্রুত নিরেট স্বর্ণপিগু ও পাল্লার সিংহাসন , সেই সমস্ত দালানটি শাদা ও সোনালি রঙের। তা ছাড়া, উচ্চ মাৰ্ব্বেল-দেয়ালে গোলাপগুচ্ছ বিকীর্ণ ; চীনাংশুকের ফুলকটি কাজের মত উছাতে টুক্‌টকে গোলাপ ও ফিক গোলাপের আভা অতি সুন্দরক্ষপে মিশ্রিত হইয়াছে। এবং আজকাল আমাদের দেশে যাহাঁকে 'নুতন শিল্পকলা' বলে, সেই শিল্পকলার পদ্ধতি অনুসারে প্রত্যেক পাপড়িটির চারিধার দিয়া স্বক্ষ সোনালি পাড় বেমালুমভাবে চলিয়া গিয়াছে। তা ছাড়া, lapis-ও-ফিরোজরচিত নীলরঙের ফুলও ইতস্তত ছড়ান রহিয়াছে।...আমাদের স্থলধরণের ‘screenপর্দার বদলে ভারতবর্ষে যে জালি-কাট মার্কেল ফলকের ব্যবহার ছিল, সেইরূপ জালি কাটা মাৰ্ব্বেল-ফলকের মধ্য দিয়া দালানের পুর দালান ক্রমাগত দৃষ্টিপথে পতিত হইতেছে। প্রাচীরবদ্ধ উদ্যানের তরুকুঞ্জে ঘুর্ভিক্ষবায়ুর উৎপীড়ন স্পষ্ট লক্ষিত হইতেছে — শরতের বায়ুর মত উহা উদ্যানতরুর শেষ পাতাগুলা চতুর্দিকে উড়াইয়া দিতেছে ; আজ ঐ সব মরা-পাত ঘুর্ণাবাতাসে উড়িয়া এই মহানিস্তব্ধ প্রাসাদের মধ্যেওঁ আসিয়া পড়িতেছে। উদ্যানের একটি•গাছে এখনোফুল ফুটিয়া আছে; বড়-বড় লাল ফুল ঝুঃধারার মত ঐ বৃক্ষ হইতে ঝরিয়া সমস্ত ধবলকুটিম—সিংহাসন দালানের সেই অপূৰ্ব্ব প্রস্তর কুটমটিকে ছাইয়া ফেলিয়াছে। ঐজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,