পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ সংখ্যা । ] সাহিত্যসম্মিলন। ৫২১ " শব্দ করিতে থাকে—তাহার অস্তিত্ব এক মুহূৰ্ত্ত ভুলিয়া থাকা কঠিন । কিন্তু কাজের সময় হঠাৎ দেখিতে পাই, যাহা সত্য,—যাহা কষ্টকল্পনা নহে—তাহার শক্তি অধিক, অথচ তাহা নিতান্ত সহজ। আমরা বিদেশী ভাষায় পরের দরবারে এতকাল যে ভিক্ষা কুড়াইলাম, তাহাতে লাভের অপেক্ষা লাঞ্ছনার বোঝাই বেশি জমিল, আর দেশ ভাষায় স্বদেশীর হৃদয়দরবারে যেম্নি হাত পাতিলাম, অম্নি মুহূর্তের মধ্যেই মাতা যে আমাদের মুঠা ভরিয়া দিলেন । সেইজন্য আমি বিবেচনা করি, তাছাকার বাংলাভাষার দল যদি গদিটা দখল করিয়া বসে, তবে আর সকলকে সেটুকু স্বীকার করিয়া যাইতে হইবে—মনে রাখিতে হইবুে, এই মিলনোৎসবের “বন্দে মাতরং” মহামন্থটি বুঙ্গসাহিত্যেরই দান ৷ 影 এ কথা বিশেষরূপে মনে রাথিবেন যে, সাহিত্যই মানুষের যথার্থ মিলনের সেতু । কেন যে, তাহার কারণ এখানে বিবৃত করিয়া বলা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না । 穩 আমাদের দেশে বলিয়াছেন—“বাক্যং রসাত্মকং কাব্যমূ”—রসাত্মক বাক্যই কাব্য। বস্তুত কাব্যের, সংজ্ঞা আর কিছুই হইতে পারে না। রস জিনিষটা কি ? না, যাহা হৃদয়ের কাছে কোনো-না-কোনো ভাবে প্রকাশ পায়, তাহাই রস, শুদ্ধ জ্ঞানের কাছে ব্যুৎ প্রকাশ পায়, তাহ রস নহে। কিন্তু ক্লকল রসই কি সাহিত্যের বিষয় ? তাহ ত দেখিতে পাই না । ভোজনব্যাপারে যে •মুখসঞ্চার হয়, তাহার মত ব্যাপকরস মানবসমাজে আর নাই, শিশু হইতে দ্বত্ব পৰ্য্যন্ত সৰ্ব্বত্রই ইহার অধিকার । তবু ত রসনাতৃপ্তির আনন্দ সাহিত্যে কেবলমাত্র বিদূষককে আশ্রয় করিয়া নিজেকে হাস্যকর করিয়াছে। গীতিকাব্যের ছন্দে তাহর রসলীলা প্রকাশ পায় নাই, মহাকাব্যের মহাসভা হইতে সে তিরস্থত। অথচ গোপনে অমুসন্ধান করিলে জানা যাইলে যে, কবিজাতি স্বভাবতই ভোজনে তাপটু বা নিষ্টান্নে অরসিক, শত্রপক্ষেও এমন অপবাদ দেয় না। ইহার একটা কারণ আছে। ভোজনের তৃপ্তিটুকু উদরপূরণের প্রয়োজনে প্রায়ই নিঃশেষ হইয়া যায়। তাহ আর উদ্ধৃত্ত থাকে না। যে রস উদৃত্ত থাকে না, সে । আপনাকে প্রকাশ করিবার জন্য ষ্যাকুল হয় না। যেটুকু বৃষ্টি মাটির মধ্যেই শুষিয়া যায়, তাহা ত আর স্রোতের আকারে বহিয়া যাইতে পারে না। এই কারণেই রসের সচ্ছলতায় সাহিত্য হয় না, রসের উচ্ছলতায় সাহিত্যের সৃষ্টি । . . কতকগুলি রস আছে, যাহা মানুষের * প্রয়োজনকে অনেকদূর পর্যন্ত ছাপাইয়া উৎসারিত হইয়া উঠে। তাহার মুখ্যধারা আমাদের আবশুকে নিঃশেষ হয় এবং গৌণধারা নানাপ্রকার ইন্দ্রজাল তুষ্ট্রি করিতে চায়। বীরপুরুষ মুখ্যভাবে তরবারিকে আপনার অস্ত্র বলিয়া জানে, কিন্তু বীরত্বগৌরব সেইটুকুতেই তৃপ্ত থাকিতে পারে নাই, সে তরবান্ধিত কারুকার্য্য ফলাইয়াছে। কলু নিজের ঘানিকে কেবলমাত্র কাজের ঘানি করিয়াই সন্তুষ্ট— তাহার মধ্যে গেণপ্রকাশ কিছুই নাই। ইহাতে প্রমাণ হয়, ঘানি কলুর মনে সেই ভাবের উদ্রেক করিতে পারে নাই, যাঁহা অবিস্তক