পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৈকেয়ী। অযোধ্য হইতে আগত দূতগণের নিকট ভরত স্বীয় মাতার কুশলসংবাদজিজ্ঞাসার সময়ে এইভাবে তাহার উল্লেখ করিয়াছিলেন,— “আত্মকামী সদা চণ্ডী ক্রোধনা প্রাজ্ঞমানিনী ।” কৈকেয়ীর কোন কুমিনা জীবনে প্রতিহত হয় নাই, সুতরাং অতিমাত্র অাদরে বঙ্কিত শিশু যেরূপ কামাবস্তু না পাইলে কিছুতেই শান্তভাব ধারণ করে না, কৈকেয়ী প্রৌঢ়বয়সেও কতকটা সেইরূপ ছিলেন, আত্মসংযম একেবারেই শেখেন নাই । ইহার উপর তিনি আবার “প্রাজ্ঞমানিনী” ਿਜ -- স্বীয় বৃদ্ধির উপর তাহার প্রবল আস্থা ষ্টিল ; সুতরাং প্রৌঢ়ার দৃঢ়তা ও শিশুর অসংযম, এই দুষ্ট উপাদান র্তাহার চরিত্রে মিশ্রিত হইয়াছিল। রামবনবাস দি ব্যাপার ঘটিবার বহুপুৰ্ব্ব হইতে ভরতের মাতৃচরিত্রসম্বন্ধে এইরূপ ধারণা ছিল । ঈদৃশ চরিত্র দশরথ রাজার অতিশয় আদরে প্রস্ত . হইয়াছিল। দেবাস্থরযুদ্ধে ক্লিষ্ট দশরথের উৎকট পরিচর্য্যা এবং রামবনবাসের ষড়যন্ত্র, এই দুই বিরুদ্ধ ঘটনা তাহার চরিত্রের অসামান্তত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রতিপন্ন করিতেছে,—উহা মাহাষ্মো যেরূপ অবাধ, নীচাশয়তায়ও সেইরূপ অবাধ । এরূপ চরিত্র সৰ্ব্বদাই প্রবল উত্তেজনায় কার্য করিয়া .থাকে, উহ! কেন্দ্রে সমাহিত থাকিবার নহে,— পরিধির এক প্রান্ত হইতে অসম্ভব দ্রুততায় অপর প্রাস্তে চলিয়া যায় । মন্থরা যখন রামাভিষেকের সংবাদ প্রদান করিয়া কৈকেয়ীর ভাবী দুরবস্থার একটা ছঃসহ চিত্র অঙ্কন করিল এবং এতৎসম্বন্ধে তাহার ঔদাস্যের তীব্র প্রতিবাদ করিয়া বহুসংখ্যক যুক্তি উপস্থিত করিল, তখন কৈকেয়ী প্রথমত সেই সকল কথায় একেবারে কর্ণপাত করিলেন না, পরস্তু গগনে সমুদিত শুভ্র চন্দ্রলেখার হায় প্রসন্নমুথে পর্য্যঙ্ক হইতে অৰ্দ্ধাঙ্গ উন্নমিত করিয়া স্বীয়বক্ষোবিলম্বিত মুক্তাহার মস্থরকে প্রদান করিয়া বলিলেন -“তুমি যে অমৃতস্বরূপ প্রিয়বাক্য বলিলে, ততোধিক প্রিয় আমার আর কিছুই নাই, সুতরাং তোমাকে আমার পুরস্কার প্রদান করা উচিত –তুমি যাহা প্রার্থনা কম্পিবে, আমি তাছাই দিব।” ” এই চিত্র হয় মহত্ত্বের শিখরদেশে প্রতিষ্ঠা পাইবে, না হয় নীচতার অধস্তন কোণে নিপতিত হইবে, ইহা মধ্যবৰ্ত্তী স্থানে অবস্থিত থাকিবার নহে। হিন্দুসমাজে গৃহলক্ষ্মী যে কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত থাকিয়া পারিবারিক মণ্ডলটি প্রীতির আকর্ষণে আবদ্ধ রাখেন, অসম উপাদানগুলিতে ঐকে্যুর সমতু প্রদান করেন, অযোধ্যার রাঙ্গন্তঃপুরে কৌশল্যার সেই স্থান ছিল, তাহ কোনকালেই কৈকেয়ীর অধিগম্য হয় নাই। স্বেচ্ছাচারিণী রমণী মহংগুণরাশিসত্ত্বেও আমাদের সমাজে নিন্দিত হন— য়মণীর নিজ ইচ্ছা বলিয়া কোন বস্তুর অস্তিত্ব