পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] অধম বলিয়া থাকি। আনন্দের শ্রেষ্ঠষ্ট্রনিকৃষ্টত-নির্ধারণে ইহাই মূলবিধান ও সৰ্ব্বসম্মত আদর্শ। এই আদর্শের দ্বারা জীবের আনন্দের বিচার করিয়া, তাহার ভালমন্দ প্রাক্ট করিলে কোনোই অন্তার হয় না। কিন্তু মাছ, সচরাচর এরূপ বিচার করে না । সে সৰ্ব্বদাই শ্রেষ্ঠতর জীবের উন্নত আদর্শের দ্বার নিকৃষ্টতর জীবের হীন আনন্দের বিচার করিয়৷ পদে পদে ভ্ৰমে পতিত হয় । উদ্ভিদের মনস্তত্ত্ব আমাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। কিন্তু নধরদেহ শু্যামলপল্লবশোভিত সতেজ গুল্মলতাকে দেখিয়া মঙ্গে হয়, যেন উদ্ভিদজীবনেও প্রকৃতি আপনার সম্যক্ সার্থকতা লাভ করিয়া অনুপম আনন্দ উপভোগ করিয়া থাকেন। কীটপতঙ্গাদির রীতিনীড়ি আমরা অনেক জানি, কিন্তু তাহদেরও মনোভাব সম্যকৃরূপে আমাদের বুদ্ধিগোচর করা অসাধ্য না হউক, নিতান্ত দুঃসাধ্য, সন্দেহ নাই। কিন্তু নিদাঘাপরাহে প্রজাপতিযুগল যখন মৃদু মলয়লহরীর সঙ্গে অঙ্গ মিলাইয়া পরস্পরের পশ্চাতে নানা রঙ্গভঙ্গে উড়িয়া বেড়ায়, তখন তারাও যে মলয়চুম্বিত রবিকরোজ্জল, কুসুমরাগগন্ধচর্চিত আকাশের উষ্ণ সংস্পশকে প্রাণ ভরিয়া সম্ভোগ করিতেছে ও অজ্ঞানত ভাগবতী লীলার অমৃততরঙ্গে ভাসিয়া পতঙ্গজীবনের পরম চরিতার্থতা • অন্বেষণ করিতেছে,— এ কথায় আর অবিশ্বাস হয় না। পশুপক্ষীর আনন্দ সকলেই প্রত্যক্ষ করেন।

  • বিশ্বে রস এক ভিন্ন দুই নাই ; একই -

মানলুধার জগতে জড়ে, উদ্ভিদে, (ರಾಥ್ರসকলের মধ্যে প্রবাহিত হইতেছে। এই সকলই নাট্যকলা ও রসতত্ত্ব। . * উদ্বেল হইয়া ব্ৰহ্মাওকে স্নিগ্ধ করিতেছে বিমুগ্ধ করিতেছে- প্রত্যুেক জীবকে তাহার আপনার প্রকৃতির চরম-চরিতার্থতা-দানে পরিতৃপ্ত করিতেছে। এ সকলই সত্য। কিন্তু উদ্ভিদের যে আনন্দ, তাহা তাহার পক্ষে উত্তমূ হইলেও, কীটপতঙ্গাদি উদ্ভিদ অপেক্ষা উন্নততর জীবের পক্ষে নিতান্তই অধম । সেইরূপ কীটপতঙ্গাদির যে আনন্দ, তাহা কীটপতঙ্গজীম্বনে সৰ্ব্বোত্তম, কিন্তু পশুপক্ষীর নিকুটেe নিকৃষ্ট, সন্দেহ নাই। আবার পশুপুল্লর পক্ষে যে আনন্দ সৰ্ব্বোত্তম, মনুষ্যের পক্ষে তাহ অত্যন্ত হীন ও দুর্ষণীর বলিয়া পরিগণিত হইবে। আনন্দতত্ত্বেও অধিকারিভেদ আছে, স্বধৰ্ম্মপরবন্ধবিচার আছে। এখানে ও– ' স্বধৰ্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধৰ্ম্মে! ভয়াবহ: | বিভিন্ন শ্রেণীর জীবের মধ্যে যেমন मानसूित्र তারতম্য আছে, সেইরূপ মানুষের মধ্যেও অনেক প্রভেদ রহিয়াছে । আনন্দের সাধারণ ধৰ্ম্ম এই যে, প্রকৃতির চরিতার্থত হইতেই তাহ। . সৰ্ব্বঞ্চ উৎপন্ন হইরা থাকে। পাশব-আনন্দে পুণ্ডপ্রকৃতির চরিতার্থত৷ সিদ্ধ হয়, মানবীয়, আনন্দে উচ্চতর মানবপ্রকৃতির চরিতীৰ্থতা সুচিত হয়, অধ্যাত্মজীবনের নিৰ্ম্মল ব্রহ্মানন্দে অধ্যাত্মজীবনের চরম চরিতার্থতা প্রমাণিত হইয়া থাকে। কিন্তু,মানুষ সকলে সমান নহে ৷ মানুষের প্রকৃতি বিভিন্ধ। কারে বা প্রকৃতি ঘোর তামসিক,—পশুত্বের ভূমি হইতে এইমাত্র যেন মানবরাজ্যে প্রবেশ করিয়াছে। সেই তামসপ্রকৃতি,মনুষ্যৈর আনন্দ-বহির্বিষয় ও বহিরিঞ্জিয়ের অতি সঙ্কীর্ণ সীমাতেই আবদ্ধ থাকিবে । তাহার পক্ষে’ তখন উন্নত • ব্ৰহ্মানন্দ-ভাগবতী লীলার তরঙ্গ হইতে তর আনন্দের অন্বেষণ করা অসম্ভধ অসাধ্য।