পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাইবনীদুর্গ। তৃতীয় পরিচ্ছেদ । সেই লোকসমুদ্রমধ্যে অন্তত এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি আপন ভুলিয়া এই আকস্মিক-আপঞ্জীতি-বিহবল , মনুষ্যমণ্ডলীতে নিরর্থক-প্রাণিহত্য-আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হইতেছিলেন। এই ব্যক্তি রাজপথের কিছু দূরে ক্ষুদ্র আম্রবাটিকায় দিনমান কাটাইয় গৃহে ফিরিবার উদ্যোগ করিতেছিলেন এবং স্নেহাম্পদের প্রত্যাগমনগ্রত্যাশায় জলেশ্বরের পথ চাহিতেছিলেন। তিনি দেখিলেন, সেই ভয়ার্চ স্ত্রীপুরুষদের বিশৃঙ্খলভাবে ইতস্তত পালাইতে পরস্পরের পদতলে পিষ্ট হইয়া যাইবে, বিশেষত স্ত্রীলোক ও বালকবালিকাদের বাচান ভার হইবে। কিছুমাত্র পূৰ্ব্বে তিনি বিশ্বস্ত সঙ্গীটিকে অশ্বারোহণের শব্দের দিকে রওনা করিয়াছিলেন। এক্ষণে চকিতে নিজের ঘোটক সজ্জিত করাষ্টয় তাহাতে সওয়ার হইলেন এবং সেই ভিড়ের চারিদিকে তীব্রবেগে ঘুরিয়া-ঘুরিয়া সকলকে বজ্ৰগম্ভীরস্বরে আশ্বাসবাণী শুনাইতে গিলেন। তাহার কথায় অনেকে বুঝিল যে, অতটা ভয় পাওয়ার কারণ নাই। বর্গীরা যাই হোকৃ—তাতারা হিন্দু, ধৰ্ম্মার্থ সমাগত হিন্দুদের প্রতি তাহারা কেন অত্যাচার করিবে ?. অতএব কতক মোক ভাঙিয়া গৈলেও মধিকাংশ এই পরামর্শে রহিয়া গেলু বক্তা তখন বলিলেন, “এস ভাইসকল, প্রথমে আমরা মেয়ে-ছেলেদের একটু তত্বাতে রাখিবার ব্যবস্থা করি। তারপর এস, পুরুষেরা দলবদ্ধ হইয়া দাড়াই ।” নিকটবৰ্ত্তী গ্রামসমূহের লোকের সবিস্ময়ে চিনিল, উপদেষ্ট স্বয়ং শিবপ্রসন্ন-দাস । যাহারা তাহাকে পূৰ্ব্বে কখন দেখে নাই, দূরদূরান্তরের এমন অনেক লোক তাহার নাম শুনিয়াই আশ্বস্ত হইল। দাসমহাশয়ের হুকুমে দেখিতে দেখিতে স্ত্রীলোক ও বালকবালিকার গাজনতলায় মহাদেবমন্দিরসম্মুথে চশিয় লইল । বাগদী এবং গৌড়গোয়ালাদের কতক তাহীদের রক্ষীর্থ নিকটে নিকটে সজ্জিত রহিল । নিজে শিবাপ্রসন্ন অবশিষ্ট লোকজন, খেলোয়াড় ও বুনো তীরধমুধারীদের কৌশলে এরূপ শ্রেণীবদ্ধ করিয়া প্রস্তুত রহিলেন যে, সহস তাঙ্গদের দেখিতে কেবলমাত্র দর্শকবৃন্দ বলিয়া প্রতীয়মান হষ্টলেও কাৰ্য্যকালে আত্মরক্ষায় বলাভাব না ঘটে । ঠাহীর শিক্ষামত সন্ন্যাসীরা পূৰ্ব্বলং চড়কগাছ ঘিরিয়া দাড়াইল এবং মুহুর্মুহু “জয় শিবশঙ্কু” রবে দিগন্ত প্রতিধ্বনিত করিতে লাগিল । কিন্তু দূরের শক্ত অসংখ্য অশ্বপদশব্দ স্পষ্টতর হইতে হইতে সহসা যেন থামিয়া গেল এবং কিছুক্ষণ পরে নবীভূত হইলেও আর উত্তরদিকে অগ্রসর হইল না। Įk দাসমহাশয়, বুঝিলেন, তাহার রাষ্ট্রবনীদুর্গাভিমুখে চলিয়া গেল। তিনি বিষগ্ন হষ্টয়া কৰ্শ্বব্যাবধারণ করিতেছেন, এান সময়ে দুইজন অশ্বারোহীকে জলেশ্বরের পথে লক্ষ্য করিয়া