পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ সংখ্যা । ], তুলিয়া বলিতে পারি, হে দারুণ, তুমিই আমার প্রিয় । , * . আমরা দুঃখের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়া অনেকবার বলিবার চেষ্টা করিয়া থাকি যে আমরা সুখদুঃখকে সমান করিয়া বোধ করিব।” কোনো উপায়ে চিত্তর্কে অসাড় করিয়া ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে সেরূপ উদাসীন হওয়া হয়ত অসম্ভব না হইতে পারে। কিন্তু সুখ তুঃখ ত কেবলি নিজের নহে, তাহা যে জগতের সমস্ত জীলের সঙ্গে জড়িত । আমার দুঃখবোধ চলিয়া গেলেই ত সংসার হইতে দুঃখ দূর হয় না । . 。 夢 so অতএব, কেবলমাত্র নিজের মধ্যে নহে, দুঃখকে তাচার সেই বিরাট রঙ্গভূমির মাঝখানে দেখিতে হইলে যেখানে সে আপনার বষ্ট্রির তাপে বজের আঘাতে কত জাতি, কত রাজ্য, কত সমাজ গড়িয়া তুলিতেছে ; যেখানে সে মানুষের জিজ্ঞাসাকে দুর্গম পথে ধাবিত করিতেছে, মামুষের ইচ্ছাকে দুর্ভেদ্য বাধার ভিতর দিয়া উদ্ভিন্ন করিয়া তুলিতেছে এবং মানুষের চেষ্টাকে কোনো ক্ষুদ্র সফলতার মধ্যে নিঃশেষিত হইতে দিতেছে না ; যেখানে যুদ্ধ7গ্রহ দুর্ভিক্ষমার অন্যায় অত্যাচার তাছার সহায় ; যেখানে রক্ত সরোবরের মাঝখান হইতে শুভ্ৰ শাস্তিকে সে বিকশিত করিয়া তুলিতেছে, দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর তাপের দ্বারা শোষণ করিয়া বর্ষণের মেঘকে রচনা করিতেছুে এবং যেখানে হলধরমূৰ্ত্তিতে সুতীক্ষ লাঙল দিয়া সে মানব হৃদয়কে বারম্বার শত শত রেখার দীর্ণ বিদীর্ণ করিয়াই তাহাকে ফলবান করিয়া টুলিতেছে। সেখানে সেই দুঃখের হত্ত্ব হইতে পরিত্রাণকে পরিত্রাণ বলে না—সেই পরিত্রাণই ছুঃখ । ($(' মৃত্যু—সেখানে স্বেচ্ছায় অঞ্জলি রচনা করিয়া যে তাহাকে প্রথম অর্ঘ্য 'না দিয়াছে সে নিজেই - বিড়ম্বিত হইয়াছে। মামুষের এই যে দুঃখ ইহা কেবল কোমল অশ্রুবাম্পে আচ্ছন্ন নহে ইহা রুঐতেজে উদ্দীপ্ত । বিশ্বজগতে তেজ:পদ্মথ যেমন, মানুষের চিত্তে দুঃখ,সেইরূপ ; তাহাই আলোক, তাহাই তাপ, তাহাই গতি, তাহাই প্রাণ ; তাহাই চক্রপথে ঘুরিতে ঘুরিতে মানব সমাজে নূতন নুতন কৰ্ম্মলোক ও সৌন্দৰ্য্যলোক স্থষ্টি করিতেছে—এই দুঃখের তাপ কোথাও বা প্রকাশ পাইয়া কোথাও বা প্রচ্ছন্ন থাকিয়া মানব সংসারের সমস্ত বায়ু প্রবাহগুলিকে বহমান করিয়া রাখিয়াছে । মানুষের এই দুঃখকে আমরা ক্ষুদ্র করিয়া বা দুৰ্ব্বল ভাবে দেখিব না। আমরা বক্ষ বিষ্ফরিত ও মস্তক উন্নত করিয়াই ইহাকে স্বীকার করিব । এই দুঃখের শক্তির দ্বার নিজেকে ভস্ম করিব না নিজেকে কঠিন করিয়া গড়িয়া তুলিব। দুঃখের দ্বারা নিজেকে উপরে না তুলিয়া নিজেকে অভিভূত কবিয়া অতলে তলাইয়া দেওয়াই দুঃখের অবমাননা—যাহাকে যথার্থভাবে বহন করিতে পারিলেই জীবন সার্থক হয় তাহার দ্বারা আত্মহত্যা সাধন করিতে বসলে কুখদেবতার কাছে অপরাধী হইতে হয়। দুঃখের দ্বারা আত্মাকে অবজ্ঞা না করি, দুঃখের ঘুরাই যেন আত্মার সম্মান উপলব্ধি করিতে পারি। 'ছ: ছাড়া সে সন্মান বুঝিবার আর কোনো পুস্থ নাই। কার, পূৰ্ব্বেই আভাস দিয়াছি দুঃখই জগতে একমাত্র সকল পদার্থের মূল্য। মামস্বাহ কিছু নিৰ্ম্মাণ করিয়াছে তাহ দুঃখ দিয়াই