পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] বারাণসী অভিমুখে | Wっ> রিচলিত লাগিল ; এই অঞ্চলটায় কেবলই পুরাতন• প্রাসাদ, নদীর ধারে কোন डिडी স্বাধী নাই। গঙ্গার উপর চতুষ্পার্শ্ববৰ্ত্তী রাজী দিগের একএকটা নিবাসগৃহ–একটু ‘পোড়ো’ধরণের—তাহারা সময়ে সময়ে সেইখানে জাসিয়া বাস করেন। প্রথমেই গুরুপিণ্ডtকার প্রকাগু প্রাকার সিধা উঠিয়াছে, তাহাতে কোনপ্রকার ছিদ্রপথ নাই, কেবল খুব উপরদিকে,–এই সমস্ত ছর্ভেদ্য আবাসগৃহের গবাক্ষ, বারগুl, জীবন আরম্ভ হইয়াছে। আজ সন্ধ্যায় প্রাসাদের ভিতরে সঙ্গীত হইতেছে— এ সঙ্গীতের সুর চাপ, র্কাজুনে, ও অল্পদমের । শনাইয়ের র্কাছনি শুনা যাইতেছে-শানাইয়ের আওয়াজটা কতকটা আমাদের hautboisযন্ত্রের আওয়াজের মত। মাঝে মাঝে একটি. মাত্র তান, একটিমাত্র বিলাপধ্বনি উপরে উঠিতেছে, আবার মরিয়া যাইতেছে ; তাহার পর, ক্ষণকাল নিস্তব্ধ,—এই নিস্তব্ধতার সময়ে কাক একবার ডাকিয়া গেল - তাহার পরেই আবার একটা তান যেন উতরের মত অন্ত এক প্রাসাদ হইতে আসিয়া পৌঁছিল। তা ছাড়া, চাকঢোলের বাস্তও শুনা যাইতেছে—যেন গুহাগহ্বরের মধ্য হইতে আওয়াজ বাহির হইতেছে। আর যেন খুব বিলম্বে-বিলম্বে ঢাকের উপর ঘ পড়িতেছে।..ঐ অতি উচ্চে, অতি দূরে, ঐ সমস্ত সঙ্গীতের রহস্যময় অনির্দেশু বিষণ্ণ সুর আমার মাথার উপর দিয়া চলিয়া যাইতেছে – এদিকে, এই নীচে জলের উপর আমার নৌকা মৃত্যু আত্মাণ করিতে করিতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতেছে! আমার নিকটইহা নে সেই তরুণীর স্বয়জনিত শোকসঙ্গীত। সেই মৃত্যুর দৃশুই অষ্টপ্রহর আমার মাথায় যেন ঘুরিতেছে — আমার কল্পনায় জাগিতেছে। আমার নিকট ইহ শোকসঙ্গীত বলিয়া মনে হইতেছে আরো অন্তলোকের জন্য, যাহারা আর নাই— আরো অন্ত জিনিষের জন্য, যাহা আর নাই। . যেমন আমি মনে করি নাই,--এই পবিত্র নগরীতে আসিয়া ধূসর আকাশ দেখিব, শীতের ভাব দেখিব, সেইরূপ ইহাও ভাবি নাই— আমার মনে ভাব পুৰ্ব্বের মতই থাকিবে,-- পূৰ্ব্বেরই মত জীবজগতের ও বাহ্যজগতের নবনব সৌন্দর্য্যে বিমুগ্ধ হইবন বারাণসী— যাহার জুড়ি নাই—যাহা ধৰ্ম্মের কেন্দ্রস্থল, যাহা . পৃথিবী হইতে বিচ্ছিন্ন একটি বৃহৎ দেশের হৃদয়, —সেই বারাণসীতে আসিয়া, সাধুদের সংসর্গে ও তাহাদের প্রসাদে আমারও কিছু বৈরাগ্য জন্মিবে, আমিও কিছু শান্তি পাইব—এই আমার আশা ছিল। সাধুরা কৃপা করিয়া আমাকে গুহাঁধৰ্ম্মে অল্পস্বল্প দীক্ষা দিবেন বলিয়া অঙ্গীকার করিয়াছেন—এই দীক্ষার অনুষ্ঠান কল্য হইতে আরম্ভ হইবে। কিন্তু দেখ, এইখানে আসিয়া,—যাহা-কিছু দেখিতে সুন্দর, যাহা-কিছু ভৌতিক, যাহা-কিছু মায়াময় ও মৃত্যুর অধীন, তাহাতেই যেন আমি পূৰ্ব্বাপেক্ষ আরো অধিক আসক্ত হইয়া পড়িতেছি—ঘোরতর আসক্ত হইয়া পড়িতেছি— * উদ্ধারের কোন উপায় দেখি না।... . আবার সেইসব চিতার নিকট ফিরিয়া আদিলাম।...এইবার প্রকৃত সন্ধ্যার আবির্ভাব হইয়াছে ; পার্থীদের আকাশভ্রমণ শেষ হইয়াছে; উহার মাদুরপ্রাসাদদির প্রত্যেক কাৰ্ণিসের উপর রাত্রিবাসের জন্য একটা দীর্ঘ রজুর আকারে সারিসারি বলিয়া গিয়াছে—পাখার ঝাপটাঝাপটিতে রজ্জ্বটা যেন স্পশিত হইতেছে,