পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা। ]. এক চাষীর ১৬বিঘা আবাদী-জমি আছে এবং• ১৬বিঘাতেই সে ধান্য রোপণ বা বপন করে । যে ৰৎসর বন্যা আসিল, সে বৎসর তাহার ১৬বিঘা জমির ফসলই ধ্বংসপ্রাপ্ত হইল। এখন পূৰ্ব্বাপেক্ষ লোকের খরচ অধিক, সুতরাং এখন কৃষক ছুই বৎসরের • খাদ্য সংগ্ৰহ করিয়া রাখিতে সক্ষম হয় না । এক বৎসরের শস্তহানি হইলেই তাহার কষ্টের অবধি থাকে না। ইহার উপর যদি পরপর দুই বৎসরেই শস্যহানি হয়, তবে তাঁহাকে কে রক্ষা করিতে পারে ? অপর পক্ষে, ঐ কৃষক ১৬বিঘা জমির মধ্যে ৬ বা ৭ বিঘা জমিত্যুে পাটবপন করিল, বাকি জমিতে ধানের চাষ করিল। বন্যায় ধান বিনষ্ট হইল, কিন্তু পাট থাকায় তাহার y০ বt le/০ আনা ফসলের দ্বারা কোনপ্রকারে দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষাপ্রাপ্ত হইতে পারে। গত দুইবৎসরে ‘পাটের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছে। এই হিসাবে বিঘা জমিতে যতন্টাকার পাট জন্মে, ১৬বিঘা ধানের জমিতেও তত টাকা প্রদান করে না। একমণ*পাট উৎপন্ন করিতে সৰ্ব্বসমেত প্রায় ৩০ টাকা বা ৪ টাকা খরচ পড়ে। ২০বৎসর পূৰ্ব্বে যখন পাট ৩ টাকায় মণ বিক্রয় হইত, তখনও বঙ্গদেশীয় প্রজাগণ ২০লক্ষ একর জমিতে পাট উৎপন্ন করিত৭ প্রজাগণ স্ব স্ব শারীরিক পরিশ্রমের কোন মূল্য হিসাবে ধর্তব্য বলিয়া মনে না করিলেও পাট অপেক্ষ ধানচাষে তাহাজের অধিক লাভ হইত, তাহ তাহার বেশ, বুৰিতে পারিত। তথাপি তাছাৱা সম্পূর্ণ ৰতি ধানরোপণন করির এত অধিক জমিত্তে পাটচাৰ কৱিত, তাহার কি কোন বিশেষ হেতু ছিল না। ইহার dنف কারণ এই যে, ধান বিমই হইলেও সে অস্তত একটা-ফসল পাট প্রাপ্ত হইবে, এই আশায় সে অনেক জমিতে তখনও পাটের চাষ করিত। ঐনিরক্ষর প্রজা আমাদের অনেক পাণ্ডিত্যাভিমানী ব্যক্তি অপেক্ষী বুদ্ধিমান • পাটের মূল্যবৃদ্ধি হওয়াতে ২-লক্ষ একরের স্থানে ৩৩লক্ষ একর জমিতে পাটচাষ হইবে, ইহাতে আশ্চৰ্য্য কি? যে সমস্ত জেলায় পাটজন্মে, তথায়ও এখন মোট আবাদী-জমির তুলনায় পাটের জমি দশভাগের একভাগ মাত্র । , সমস্ত বঙ্গদেশের আবাদী-জমির পরিমাণে এই পাটের জমি অধিক নয়। ইহাতেই পাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা কেবল বাঙালীর অসারত্ব প্রমাণ করে"। বন্যায় পূৰ্ব্ববঙ্গের ধান্য বিনষ্ট হওয়ায় গত দুইবৎসরে চাউলের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি পাইয়াছিল, পাটের চাষ ইহার কারণ নহে। পাটের চাষে চাউলের মূল্যবৃদ্ধি হইলে • যত জমিতে পাট জন্মে, তদনুযায়ী অর্থাৎ ১৬আনায় একআন বৃদ্ধি হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, এখন ১ঙুবিঘা জমির মধ্যে মাত্র এক বিঘায় পাট জন্মে—৩ টাকার স্বত্বে যে ৮ টাকায় চাউলের মণ বিক্রয় হইয়াছে, ইহা কখন পাটের চাষ বৃদ্ধি হওয়ার জন্য হইতে পারে না। যদি পাটের চাষ চাউলের মূল্যবৃদ্ধি করিয়া থাকে, তবে ইহাতে প্রজার লাভ বই লোকসান কি ? প্রজা যদি বুঝে যে, সে একবিঘা জমির ধানে মত টাকা প্রাপ্ত হয়, তদপেক্ষা অধিক টীকা পাটে প্রাপ্ত হইবে, তবে সে ধানের পরিবর্তে পাট চাষ করিয়া ঐ পাটের টাকাদ্বারা অন্যত্র হইতে ধান আমদানি করিবে। ইহাতে তাহার বিজ্ঞতাই প্রকাশ পাইবে ।" রল বাহুল্য যে, ভারতবর্ষের শতকরা ৮জন কৃষিকাৰ্য