পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । به هد ছিল না। কারাগারের পার্শ্বে প্রহরীগণ নিঃশব্দে খড়গহস্তে দিবারাত্রি দণ্ডায়মান থাকিত। সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময় একজন ব্রাহ্মণ নিঃশব্দে আহারীয় দ্রব্য আনয়ন করিয়া দিত,—আহার সাক্ষ হইলে একমাত্র দাসী নিঃশব্দে সেই স্থান পরিষ্কার করিয়া যাইত। ইহা ভিন্ন তার কেহই সেই গৃহে প্রবেশ করিতে পারিত না । মধ্যে মধ্যে কোন নিষ্ঠুর পাঠান সেনাপতি ইন্দ্রনাথের এই দুর্দশায় উপহাস করিতে আসিতেন, অথবা কোন যথার্থ সাহসী, উন্নতচরিত্র সেনাপতি, শত্রুপক্ষীয় বীরপুরুষের হীনাবস্থা দেখিয়া যথার্থ শোকাশ বর্ষণ করিতে আসিতেন । শত্রুর উপহাসে ইদ্রনাথেয় হৃদয়ে কিছুমাত্র বেদন হইত না,—যাহtয় যথার্থ গুণ আছে, সে কবে সামান্ত লোকের উপহাসে কাতর হয় ?—কিন্তু শক্র হইয়াও ইন্দ্রনাথের দুঃখে যথার্থ দুঃখ প্রকাশ করিলে ইন্দ্রনাথের হৃদয় দ্রবীভূত হইত। পাঠানশিবিরের মধ্যে ইন্দ্রনাথের কেবল একমাত্র বন্ধু ছিল । যে দাসী প্রত্যহ সন্ধ্যায় সময় সেই কারাগৃহ পরিষ্কার করিতে আসিত, সেই ইন্দ্রনাথের দুঃখে যথার্থ দুঃখিনী । দাসী স্ত্রীলোক, স্ত্রীলোকের পাঠান মোগল জ্ঞান নাই, শত্রু মিত্র জ্ঞান নাই, পরের দুঃথে চিরকালই দুঃখিনী। আমাদের সুখের সময়, সম্পদের সময়, তাহলাদের সময় রমণী কতবার দ্বেষ করেন, কতবার ক্রোধ কয়েন, কতবার মুখরা হইয়া কলহ করেন ; কিন্তু যখন জীবনাকাশে দুঃখরূপ মেঘরাশি সঞ্চিত হইতে থাকে, যখন আমাদের আশাপ্রদীপ নিৰ্ব্বাণ হইলে আমরা ভীষণ নৈরাশ-তিমিরে আচ্ছন্ন হই, যখন ক্লেশ বা শোকে বা পীড়ায় আমরা বিহবল হই, তখনই রমণী যথার্থ আপন ধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন, তখন রমণীর মত আমাদের দুঃথে কে দুঃখিনী হয়, আমাদের পীড়ায় কে শুশ্রুষা করে, আমাদের শোকে কে ভরসা দান করে, আমাদের বিপদে কে আশ্বাস দেয় ? পীড়ার শয্যার অনিদ্র, অবিশ্রাত্ত হইয়া দিবানিশি কে উপবেশন করিয়া পীড়িতের শুষ্ক ওষ্ঠে জল, দুগ্ধ দান করে ? শোকের সময় আপনার হৃদয়-কবাট উদঘাটন করিয়া কে অবারিত অশ্রুবর্ষণে আপন বসন সিক্ত করিয়া আমাদের সমদুঃখিনী হয় ? বিপদের সময় কে অনন্ত মায়ার ভাণ্ডার হইতে অনন্ত অজস্র মায়াস্রোত দ্বারা আমাদের সাস্বনা দেয় ? জগতে রমণীরত্বের মত রত্ব নাই। স্বর্গে কি আছে ? ইন্দ্রনাথের দুঃখে সেই দাসীই যথার্থ দুঃখিনী। প্রত্যহ নীরবে আদিয়! নীরবে প্রস্থান করিত বটে, কিন্তু সেই সুপুরুষের দুঃখ দেখিয়া অন্তরালে অশ্রুবিন্দু বর্ষণ করিত। নির্দয় পাঠান বন্দীকে অতিশয় কষ্টে রাখিয়াছিল,—শয়নের জন্ত ভূমিতে কেবলমাত্র তৃণশয্যা রচিত হইয়াছিল,—