পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{8 বঙ্গবিজেতf । অনেকদিন হইল গৃহত্যাগ করিয়৷ আসিয়াছেন। যদিও তিনি এইরূপ মধ্যে মধ্যে গৃহত্যাগ করিয়া পৰ্য্যটন করিয়া থাকেন,তথাপি পিতা তাঁহার জন্য কতই চিন্তা করিতেছেন, সন্দেহ নাই । কবে গৃহে ফিরিয়া যাইবেন ?—যেরূপ কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হইয়াছেন, কখনও কি গৃছে,ফিরিয়া যাইবেন ? ইন্দ্রনাথের অন্তঃকরণ স্বভাবতঃ সাহসী,—তিনি সমস্ত জগৎকেই আপন গৃহ বলিয়া মনে করিতেন,--মানবজাতিকে ভ্রাতা বলিয়া মনে করিতেন । তথাপি প্রবাসে আসিয়া পিতৃগৃহের জন্য একবারও চিত্ত৷ হয় না, এমন হৃদয়ই নাই। ইন্দ্রনাথের হৃদয়েও এক এক বার চিন্ত হইত। কি করিতেই বা আসিয়াছেন ? এই প্রশ্নেরও সহসা উত্তর দিতে পারি লেন না । সমরসিংহের মৃত্যুর প্রতিহিংসা-সাধন-জন্য । সত্য, কিন্তু সে প্রতিহিংস কিসে সাধন হইবে ? আপনি অtশ্রয়হীন, সহায়হীন, সম্পত্তিহীন, অপরিচিত লোক হইয়া কিরূপে সে প্রতিহিংসা সাধন করিবেন ? রাজা টোডরমল্ল মুঙ্গেরে আছেন, তাঁহার নিকট ঘাইয়া বিচার প্রার্থনা করিলে হয় না ? রাজা টোডরমল্ল এক্ষণে যুদ্ধসংক্রান্ত বিষয়ে মগ্ন, এক্ষণে কিরূপে তিনি অন্য বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিবেন ? বঙ্গদেশ এখনও জয় করিতে পারেন নাই,-- কিরূপে বঙ্গবাসীদিগের স্তায় অন্যায় বিচার করিবেন ? আর যদিই বা সে বিচার করিতে এক্ষণেই সক্ষম হয়েন, মানসও করেন, অপরিচিত লোকের কথায় বিশ্বাস করিবেন কেন ? মান্যবর দেওয়ানজীর বিরুদ্ধে একজন অপরিচিত জমীদারপুত্র যাহা বলিবেন তাহা কি বিশ্বাসনীয় ? রাজা টোডরমল্ল বিচার করিতে সম্মত হইলেও ইন্দ্রনাথ এমন প্রমাণ কোথায় পাইবেন যে, সতীশচন্দ্রের উপর দোষারোপ হইবে' আর সহসা দোষারোপ করা কি উচিত ? মহেশ্বর-মন্দিরে অপরিচিত। রমুণী যাহা বলিয়াছেন, ইন্দ্রনাথ তাহ বিস্কৃত হয়েন নাই । সে রমণী যে মিথ্যা বলিয়াছেন তাহাও বোধ হয় না, কিন্তু তাহার কথা যদি সত্য হয়, তবে সতীশচন্দ্র নিরপরাধী। সে কি সম্ভবে ? যাহা হউক, নিশ্চয় না জানিয়া . কি সতীশচন্দ্রের উপর দোষারোপ করা উচিত ? * আর সেই রমণী যাহার নাম করিয়াছিল, সে শকুনিই বা কোথায় ? ইন্দ্রনাথ যত ভাবিতে লাগিলেন, ততই অধিকতর ইতিকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইলেন। অনেকক্ষণ একাকী সেই গঙ্গার তীরে পদচারণ করিতে করিতে চিস্ত করিতে লাগিলেন, কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না । অবশেষে শ্রান্ত হুইয়া সেই , তীরে উপবেশন করিলেন । ভাবিলেন, “এক্ষণে কোন উপায় দেখিতেছি না। মুঙ্গেরে কিছুদিন অবস্থান করা যাউক, সময় বুঝির কার্য্য করিব।”