পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । তথাপি এ অসম্ভব কথা বিশ্বাস করিতে পারিলেন না। তিনি বিবেচনা করিলেন, এই নাবিকের কল্পনাশক্তি যেরূপ উত্তেজিত দেখিতেছি, নিশ্চয়ই পরে যে রমণীর প্রেমে বদ্ধ হইয়াছিল, তাহারই প্রতিমার সহিত পূৰ্ব্বকার প্রেমচিস্তার যোগ করিতেছে। সুরেন্দ্রনাথ এইরূপ আলোচনা করিতে লাগিলেন, কিন্তু সেই অপূৰ্ব্ব পুরুষের গাম্ভীৰ্য্য ও চিন্তার বেগ দেখিয় কিছু বলিলেন না । সেও অনেকক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়৷ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিতে লাগিল— “সুরেন্দ্রনাথ ! আমি আর অধিক কথা কহিতে পারি না। জিজ্ঞাসায় জানিলাম, সেই রমণী ব্রাহ্মণকন্যা ও অবিবাহিত। পাণিগ্রহণ করিলাম, তাহার পর দুই বৎসর যেরূপ সুখস্বপ্নে অতিবাহিত হইল, সেরূপ পূৰ্ব্বেও কখন হয় নাই । কিন্তু সে কথা আর কিজান্য বলি ? আপনার যেরূপ পবিত্র হৃদয়, অবশুই পবিত্র প্রেম কাহাকে বলে জানিয়াছেন, যদি না জানেন, শীঘ্রই জানিবেন,—আপনি ভিন্ন অনেকেই পবিত্র প্রেমের প্রভাব জানিয়াছেন ;–কিন্তু আমার মত গাঢ় প্রেম মানবজাতির মধ্যে কেহ কখন জানেন নাই, জানিবেন না ।

  • ঐ যে নিকুঞ্জবন দেখিতেছেন, ঐ স্থানে আমরা বাস করিতাম । শরৎকালের উষা-আকাশে যে পবিত্র বর্ণ বিস্তীর্ণ করে, প্রেম আমাদের হৃদয়-আকাশে তদপেক্ষা পবিত্র বর্ণে চিরকালই রঞ্জিত হইয়৷ থাকিত । সন্ধ্যার ঈষৎ অন্ধকার যেরূপ শাস্ত, নিস্তব্ধ, গম্ভীর, আমাদের হৃদয়ে প্রেম তদপেক্ষ নিস্তব্ধ, শান্তভাবে বিরাজ করিত । সেই রমণীকে আমি সন্ধ্যা বলিতাম, কেননা তাহার প্রকৃতি সন্ধ্যায় হ্যায় মান, নিস্তব্ধ ও চিন্তাশীল । আমি তাহাকে প্রেমপ্রতিমা বলিতাম, কেননা তাহাকে দেখিবার অনেক দিন পূৰ্ব্ব হইতে তাহার প্রতিমা আমার হৃদয়ে জাগরিত ছিল । আমি তাহাকে কুঞ্জবাদিনী বলিতাম, কেননা ঐ যে কুঞ্জবন দেখিতে পাইতেছেন, ঐ স্থানে”—

আর কথা সরিল না । সুরেন্দ্রনাথ দেখিলেন নাবিক উন্মত্তের ন্যায়. সেই কুঞ্জবনেয় দিকে চাহিয়া রহিয়াছে,—মুখে কোন ভাবই নাই, সংজ্ঞার কোন লক্ষণই নাই। অনতিবিলম্বেই সেই নিম্পন্দ শরীর মুস্থিত হইয়। পড়িল । সুরেন্দ্রনাথ অনেক যত্নে তাহাকে চৈতন্যদান করিলেন । পরে অন্য কথা কহিতে কহিতে রাত্রি অনেক হইল। দুই ভ্রাতার মত দুইজন “এক শয্যায় শয়ন করিলেন, অচিরে নিদ্রায় অভিভূত হইলেন ।