যদি স্ত্রীলোকে করে তবে সে বিধবা হয় এ কি সত্য কথা। যদি এটা সত্য হয় তবে মেনে আমি পড়িব না, কি জানি ভাঙ্গা কপাল যদি ভাঙ্গে।
উ। না বইন, সে কেবল কথার কথা। কারণ আমি আমার ঠাকুরাণী দিদির ঠাঁই শুনিয়াছি যে কোন শাস্ত্রে এমত লেখা নাই, যে মেয়্যা মানুষ পড়িলে রাঁড় হয়। কেবল গতর শোগা মাগিরা এ কথার সৃষ্টি করিয়া তিলে তাল করিয়াছে। যদি তাহা হইত তবে কত স্ত্রীলোকের বিদ্যার কথা পুরাণে শনিয়াছি, ও বড়২ মানষের স্ত্রীলোকেরা প্রায় সকলেই লেখাপড়া করে এমত শুনিতে পাই। সংপ্রতি সাক্ষাতে দেখ না কেন, বিবিরা তো সাহেবের মত লেখাপড়া জানে, তাহারা কেন রাঁড় হয় না।
প্র। ভাল। যদি দোষ নাই তবে এতদিন এ দেশের মেয়্যা মানষে কেন শিখে নাই।
উ। শুন লো। যখন স্ত্রীলোক মা বাপের বাড়ী থাকে, তখন তাহারা কেবল খেলাধূলা ও নাটরঙ্গ দেখিয়া বেড়ায়। বাপ মায়ও লেখাপড়ার কথা কহেন না। কেবল কহেন, যে ঘরের কায কর্ম্ম রাঁধা বাড়া না শিখিলে পরের ঘরকন্না কেমন করিয়া চালাইবি। সংসারের কর্ম্ম দেয়া থোয়া শিখিলেই শ্বশুরবাড়ী সুখ্যাতি হবে। নতুবা অখ্যাতির সীমা নাই। কিন্তু জ্ঞানের কথা কিছুই কহেন না।
প্র। হায়২ কেমন দুঃখের কথা দিদি। ভাল প্রায় সকল গাঁয়েই তো পাঠশাল আছে, তবে কন্যারা আপনারাই সেখানে গিয়া কেন শিখে না। তখন তো বাল্যকাল থাকে কোন স্থানে যাইবার বাধা নাই।
উ। হেদে দেখ দিদি বাহির পানে তাকাইতে দেয় না। যদি ছোট২ কন্যারা বাটীর বালকের লেখাপড়া দেখিয়া সাদ করিয়া কিছু শিখে ও পাততাড়ি হাতে করে তবে তাহার অখ্যাতি জগৎ বেড়ে হয়। সকলে কহে যে এই মদ্দা ঢেঁটি ছুঁড়ি বেটাছেলের মত লেখাপড়া শিখে, এ ছুঁড়ি বড় অসৎ হবে। এখনি এই, শেষে না জানি কি হবে। যে গাছ বাড়ে তাহার অঙ্কুরে জানা যায়।” পৃ ১-৪
কিন্তু এত করিয়াও মিশনরী-পরিচালিত বালিকাবিদ্যালয়গুলি জনপ্রিয় হইয়া উঠিতে পারে নাই। ইহার কারণ ইঁহাদের শিক্ষাবিস্তার প্রচেষ্টা যে অবিমিশ্র সদিচ্ছাপ্রসূত ছিল না, খ্রীস্টধর্ম বিস্তারই যে মুখ্য লক্ষ্য ছিল, তাহা ধরা পড়িতে বিলম্ব হয় নাই। সতরাং উক্ত বিদ্যালয়গুলিতে একমাত্র দরিদ্র-ঘরের—অনেক স্থলে নিম্নবর্ণের ছাড়া কোনো শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা যোগদান করেন নাই। প্রকৃতপক্ষে সম্ভ্রান্ত হিন্দুরা মেয়েদের প্রকাশ্য বিদ্যালয়ে পাঠাইবার আদৌ পক্ষপাতী ছিলেন না। এই