গত শতাব্দীর সপ্তম দশক পর্যন্ত ইতিহাস সংক্ষিপ্ত। এই সময়ে বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে এমন এক প্রতিভাশালিনী মহিলা আবির্ভূত হইলেন যাঁহার গদ্য-পদ্যে আমরা সর্বপ্রথম শিল্পসুষমার আস্বাদ পাইলাম, যাঁহার হাতে বঙ্গভারতীর বীণায় মৌলিক নারী-সুর ঝংকৃত হইল; ইনি রবীন্দ্রনাথের অগ্রজা স্বর্ণকুমারী দেবী। প্রতিভার যাদুস্পর্শে সর্বপ্রথম ইঁহার রচনাই রসমণ্ডিত হইয়া সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গল্প উপন্যাস, কবিতা গান, নাটক প্রবন্ধ ও বিজ্ঞান—এক কথায় সাহিত্যের সকল বিভাগেই তাঁহার দান স্বীকৃত হইতে থাকে। এই সাফল্যের প্রভাব অচিরাৎ পরিলক্ষিত হয়। এই সময় হইতে শতাব্দীর শেষ পাদ পর্যন্ত এমন কতকগুলি মহিলা-সাহিত্যিকের আবিভাব ঘটে, যাঁহারা বঙ্গসাহিত্যে বিশিষ্টতা অজন করেন। তাঁহাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও রচনাবলীর কালানুক্রমিক তালিকা দিতেছি:
স্বর্ণকুমারী দেবী। আনুমানিক ১৮৫৫ খ্রীস্টাব্দে কলিকাতা জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরপরিবারে স্বর্ণকুমারী দেবীর জন্ম হয়। তিনি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা; রবীন্দ্রনাথের ভগিনী। ১৮৬৭ সনের ১৭ই নবেম্ববর ১৩ বৎসর বয়সে জানকীনাথ ঘোষালের সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। স্বর্ণকুমারীর সুদীর্ঘ জীবন বাণী-সাধনায় সমুজ্জ্বল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বঙ্গভারতীর সেবা করিয়া গিয়াছেন। সাহিত্যে তাঁহার দান সুবিপুল। বঙ্গমহিলাদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম সার্থক উপন্যাস, গাথা ও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁহার রচিত গ্রন্থাবলী:
- ১ দীপ-নির্ব্বাণ (উপন্যাস): ১২৮৩ সাল (১৫-১২-১৮৭৬)। পৃ ৩২১।
- ২ বসন্ত উৎসব (গীতিনাট্য): ১৮০১ শক (৪-১১-১৮৭৯)। পৃ ৪০।
- ৩ ছিন্নমুকুল (উপন্যাস): (৪-১১-১৮৭৯)। পৃ ২৩৮।
- ৪ মালতী (উপন্যাস): ১২৮৬ সাল (২৫-৩-১৮৮০)। পৃ ৪৪।
- ৫ গাথা: ১২৮৭ সাল (২০-১২-১৮৮o)। পৃ ৯৫।
- ৬ পৃথিবী (বৈজ্ঞানিক পুস্তক): আশ্বিন ১২৮৯ ২ে৭-৯-১৮৮২)। পৃ ১৮৪।