বিশিষ্ট আসন দান করিয়াছে। ইহার সমালোচনা-প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছিলেন:
“এমন সজীব সত্য চিত্র বাংলা কোনো গল্প বইয়ে আমরা দেখি নাই।”
তাঁহার সমগ্র রচনাবলী সম্প্রতি গ্রন্থাবলী-আকারে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ কর্তৃক প্রকাশিত হইয়াছে।
শরৎকুমারীর শেষজীবন বৈধব্য অবস্থায় কাটে; স্বামীর মৃত্যুর (৫-৯-১৮১৮) ২২ বৎসর পরে—১৯২০ সনের ১১ই এপ্রিল তিনি পরলোকগমন করিয়াছেন।
মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায় (মোক্ষদা দেবী)। ইনি ডবলিউ. সি. বোনার্জীর সহোদরা। বউবাজারের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের বিশ্বনাথ মতিলালের দৌহিত্র শশিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সহিত ইঁহার বিবাহ হয়। মোক্ষদায়িনী উচ্চশিক্ষিতা মহিলা ছিলেন। তাঁহার রচিত ‘বন-প্রসূন’ কাব্য সমালোচনাকালে সঞ্জীবচন্দ্র-সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ (জ্যৈষ্ঠ ১২৮৯) যে মন্তব্য করেন, তাহা উদ্ধারযোগ্য:
“মুখোপাধ্যায় মহাশয়ার কবিতাগুলি পড়িয়া আমরা মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি যে তিনি ক্ষমতাশালিনী বটে। .. আমরা এই গ্রন্থকর্ত্রীর অন্যান্য গুণের প্রশংসা ছাড়িয়া দিয়া তাঁহার কাব্যগত সাহসের প্রশংসা করিব। সকলেই জানেন, বাঙ্গালায় সাহিত্যসংগ্রামক্ষেত্রে বাবু হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় অদ্বিতীয় মহারথী। তাঁহার প্রতি শরসন্ধানে সাহস করে বাঙ্গালার পুরুষ লেখকদিগের মধ্যে এমন শূর বীর কেহ নাই। তাঁহার প্রণীত “বাঙ্গালীর মেয়ে” নামক কবিতার জ্বালায় অনেক বাঙ্গালীর মেয়ে আজিও কাতর। আজি সেই আঘাতের প্রতিশোধের জন্য এই কাব্যবীরাঙ্গনা বদ্ধপরিকর—ধৃতাস্ত্র। হেমচন্দ্রের ঐ কবিতার উত্তরে মোক্ষদায়িনী “বাঙ্গালির বাবু” শিরোনামে একটি কবিতা লিখিয়াছেন। কবিতাটি বড় রঙদার—লেখিকার লিপিশক্তিপরিচায়িকা—আদ্যোপান্ত পাঠের যোগ্য।”
রচনার নিদর্শন-স্বরূপ আমরা মোক্ষদায়িনী-লিখিত ‘বাঙ্গালির বাবু’ কবিতাটির কয়েক পংক্তি উদ্ধৃত করিতেছি:
“হায় হায় অই যায় বাঙ্গালীর বাবু।
দশ্টা হ’তে চারটাবধি দাস্য বৃত্তি করা
সারাদিন বইতে হয় দাসত্ব পশরা।