পাতা:বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (কায়স্থ কাণ্ড, পঞ্চমাংশ, উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ কাণ্ড, তৃতীয় খণ্ড).djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి{33 বঙ্গের জাতীক্স ইতিহাস ১৩শ অধ্যায়। একশত সশস্ত্র পুলীশ ও কেনির দুইশত লাঠিয়াল সহ সমস্ত রাত্রি কুঠতে মেম সাহেবকে রক্ষা করিলেন । কেনি প্রাণভয়ে স্থানান্তরে রাত্রিবাস করিয়াছিলেন। এদিকে প্যারীসুন্দরী নিজের লোক জনকে সাবধান করিয়৷ বলিয়া দিলেন, কেনি সাহেব বিলাত হইতে লোকজন আনেন নাই। দেশের লোক যদি তাহার টাকায় বশীভূত হইয় দেশের লোকের অনিষ্ট করে তবে আমি কি করিব ? তোমর সাহেবের টাকার বশীভূত হইও না। সাহেবকে আঘাত না করিয়া ধরিয়া আনিবে, মেম সাহেবের উপর যেন অত্যাচার না হয় । বল বাহুল্য প্যারীসুন্দরীর সুশিক্ষিত ও বাছাই একশত লাঠিয়াল যথাকালে কেনি সাহেবের কুঠী আক্রমণ করিল ও কুঠার প্রাঙ্গণে গিয়া কেনি সাহেবকে পুনঃ পুনঃ আহবান করিল। কিন্তু কেনি সাহেবের পরিবর্তে তথায় ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবকে দেখিয় তাহারা তাহাকে সেলাম করিয়া পশ্চাৎ হঠিতে লাগিল। সাহেব ও জনৈক মুসলমান দারোগ ঘোড়ায় চড়িয়া “পাকড়ে, পাকড়ো” বলিয়। তাহদের পশ্চাতে ছুটলেন । পুলিস দলও সেই সঙ্গে ছুটিল। প্যারীসুন্দরীর লোকগণ র্তাহাদিগকে পশ্চাৎ ধাবন করিতে নিষেধ করিলেন । সাহেব ক্ষান্ত হইলেন, কিন্তু দারোগ শুনিলেন না | প্যারীসুন্দরীর লোকগণ দারোগীকে বল্লমে বিদ্ধ করিয়া লইয়া সস্তরণ পূৰ্ব্বক নদী পার হইয়া কোথায় চলিয় গেল কেহ দেখিতে পাইলেন না । ম্যাজিষ্ট্রেট মুর্ভূিত হইলেন ও পুলীস অবাক হইয়৷ রছিলেন। এতদুপলক্ষে কঠিন ফৌজদারী মোকদ্দমায় প্যারীমুন্দরীর বহু অর্থ ব্যয় হইয়াছিল। ইহার পরেও কেনি সাহেব প্যারীসুন্দরীকে ধরিবার চেষ্টা করিয়া তাহার কৌশলে নিজেই ধরা পড়িয়াছিলেন । বন্দী হইয়া সদরপুরের বাড়ীতে নীত হইয়। সাহেব অনশনত্রত আরম্ভ করিলেন। পরে প্যারীসুন্দরী সাহেবের সম্মুখে উপস্থিত হইলে তাহাকে মাতৃসম্বোধন করিয়া তাহার হাতে খাইতে চাহিলেন । প্যারীসুন্দর সাহেবকে সন্তানস্নেহে ভোজন করাইলেন । তৎপরে সাহেব বলিলেন, ‘মা, আপনি বলিয়াছিলেন আমার মাথায় নীল বুনিবেন, একটা গামলা আনিয়া আমার মাথায় রাখিয়া নীল বুনিয়া দিউন । প্যারীমুন্দরী বলিলেন আর নীল বুনিবার প্রয়োজন নাই। সাহেব কিন্তু শুনিলেন না অগত্য র্তাহার মাথায় নীল বুন হইল। তৎপরে মুক্তিলাভ করিয়৷ সাহেব নিজ কুঠীতে ফিরিয়া গিয়া নীলের চাষ উঠাইয়া দিয়াছিলেন । তিনি বলিয়ছিলেন, প্যারীসুন্দরীর মত আর ২৪টী স্ত্রীলোক জমিদার থাকিলে এদেশে ইংরাজকে ব্যবসায় করিবার অtশ ত্যাগ করিতে হইত। গুনা যায় প্যারীসুন্দরীর আদর্শে স্বৰ্গীয় বঙ্কিমবাবু তাহার দেবীচৌধুরাণী লিখিয়া ছিলেন। প্যারীসুন্দরী বালিয়া রঘুনাথ সিংহবংশ হইতে একটা সন্তান আনাইয় দত্তক গ্রহণ করিয়াছিলেন। উক্ত পুত্রের নাম হইয়াছিল তারিণীচরণ সিংহ। ব্রজসুন্দরীর ও প্যারীমুন্দরীর মৃত্যু হইলে বল্লীকান্ত ঘোষের পৌত্রগণ আমলা সদরপুর এষ্টেটের অধিকার পাইবার জষ্ঠ মুর্শিদাবাদে মোকদম উপস্থিত করিয়াছিলেন । তারিণীচরণ বহু কষ্টে উক্ত মোকদমায় জয়লাভ করিয়াছিলেন (১) (১) উত্তররাষ্ট্ৰীয় কায়স্থ-বিবরণের প্রথমখণ্ডের ৮৩ পৃষ্ঠায় তারিণীচরণের বংশবিবরণ রছিয়ছে।