পাতা:বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (কায়স্থ কাণ্ড, প্রথমাংশ, রাজন্য কাণ্ড).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস وان" শ্ৰাদ্ধাদি বৃহৎ ব্যাপারে ভাটগণ আসিয়া কৰ্ম্মকৰ্ত্তার গুণানুকীৰ্ত্তন করিতেন। কিন্তু বল্লালীসমাজে এবং তাঙ্গর অনুবৰ্ত্তী অপরাপর সমাজে ও কুলাচাৰ্য্যনিয়োগের পর তাহার ব্যতিক্রম ঘটিল। ভাটের কার্য্য কতকটা অব্যাহত থাকিলেও কুলপুরোহিত ও কন্যাকৰ্ত্তা স্ব স্ব কর্তব্য কুলাচার্যোর উপর দিয়া কতকটা নিশ্চিন্তু কইলেন। পূৰ্ব্বপ্রথা এককালে বিলুপ্ত না করিয়া বিবাহুকালে উভয়পক্ষে তিনপুরুষের মাত্র পরিচয় দিবার ব্যবস্থা রহিৰু। আৰ্য্য-সমাজে সগোত্রে বিবাঙ্গ নিষিদ্ধ ছিল, এ কারণ বিবাহুস্থলে উভয়পক্ষে তিনপুরুষের নামোচ্চারণকালে গোত্রপ্রবর-উচ্চারণের প্রথা থাকিয়া গেল। আজ ও এই নিয়ম চলিয়া আসিতেছে। কুলাচাৰ্য্যগণের উপর কুলপরিচয়-রক্ষা ও সম্বন্ধনির্ণয়ের ভার পড়িলে, সমাজে সুফল ও কুফল ছুই দেখা দিল । সামাজিক ও পারিবারিক গৌরবরক্ষার জন্য প্রত্যেক পরিবারের কাৰ্য্যকলাপের উপর দৃষ্টি রাপাই যখন কুলাচাৰ্য্যগণের একমাত্র উপজীবিক ও কর্তব্যকাৰ্য্য হইল, তখন তাছারা প্রত্যেক সন্ত্রাস্ত ব্যক্তির বংশাবলি, আদান-প্রদান ও পরিচয়াদি পুঙ্খামুপুঙ্খরুপে লিথিয় রাথিতে লাগিলেন, তাহাতে একস্থানে সন্ত্রান্ত সমাজের সম্যক্ পরিচয় পাইবার সুযোগ হইল, সামাজিকমাত্রেই স্ব স্ব কুলমৰ্য্যাদা রক্ষার জন্য সাধ্যমত যত্নবান হইলেন। —পাছে কোন কাজে দোষ বাহির হইয়া পড়ে-–পাছে তাহা প্রস্তররেখাবৎ চিরদিনের জন্ত লিপিবদ্ধ হয়, এই আশঙ্কায় সকলেই বিশেষ সতর্ক হইলেন, এমন কি, অনেকেই কুলাচার্ঘ্যের মুখাপেক্ষী হইয়া পড়িলেন। তাই একদিন গৌড়বঙ্গের ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ এই উভয় আৰ্য্যসমাজেই কুলাচার্যের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ও প্রভাব বৃদ্ধি হইয়াছিল ; এমন কি, একদিন তাহারাই সমাজের নিয়ামক ও ভাগ্যবিধাতা হইয় পড়িয়াছিলেন । তাঙ্গাদের আদেশ বা অনুরোধ অবজ্ঞা করিবার কাহারও সাধ্য ছিল না। র্তাহারা প্রত্যেক লিবা সভায় উপস্থিত থাকিতেন,—একদল সংস্কৃতভাষায় সংক্ষেপে, আর একদল প্রচলিত বাঙ্গালা ভাষায় বিস্তৃতভাবে উচ্চৈঃস্বরে অংশ, বংশ ও দোষগুণ গান করিতেন । সহস্ৰ সহস্র ব্যক্তি আত্মহারা হইয়া ভক্তিভাবে সেই কুলকাহিনী গুনিতেন । আমাদের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে যেমন পঞ্জিকা দেখা আবশুক হয়,—পঞ্জিকায় , অতি সংক্ষেপে যেমন প্রত্যেক দিনকৃত্য ও অনুষ্ঠানাদি লিখ্রিত থাকে, সেইরূপ প্রত্যেক পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তির অংশ বংশ ও করণীয় সামাজিক কুলনিয়মাদি যাহাতে লিখিত হইত, তাহাই ‘কুলপঞ্জিকা' নামে কথিত হইয়াছে। যে সকল শাস্ত্রজ্ঞ ব্ৰাহ্মণ বা কায়স্থ সমাজতত্ত্ব ও কুলপরিচয় রক্ষা করিতেন, তাহারাই ‘কুলাচাৰ্য্য’ বা 'ঘটক' নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছিলেন। ব্রাহ্মণ ও বন্যস্থ উভয়জাতির কুলগ্রন্থেই লিখিত আছে—

  • অংশ ৰংশং তথা দোষং যে জানস্তি মহাজনঃ ।

ত এৰ খটকা জেয়া ন নামগ্ৰহণাৎ পুনঃ ॥” যে মহাজনগণ আদান-প্রদানাদি সম্বন্ধনির্ণয়, পূৰ্ব্বাপর বংশাবলি এবং প্রত্যেক কুলের দোষ অবগত আছেন, তাহারাই প্রকৃত ঘটক, কেবল ঘটক নাম লইলেই ঘটক হয় না। গ্রত্যেক সামাজিক ব্যাপারে ঘটক বা কুলাচাৰ্য্য এবং সেই সঙ্গে কুলপঞ্জিকার আবগুক হইত।