পাতা:বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (ব্রাহ্মণ কাণ্ড, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ses বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস ' ব্রাহ্মণৰাও অল্প বয়সে বিধবা হইয়। রাণী ভবানী কঠোর ব্ৰহ্মচর্ষ্যে জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি প্রত্যহ রান্ত্ৰি চারিদও থাকিতে গাত্ৰোখান করিতেন। জপ সাঙ্গ করিয়া অৰ্দ্ধ ও রাত্রি থাকিতে তিনি স্বহস্তে পূজার ফুল তুলিবার জন্ত পুষ্পোপ্তানে যাইতেন। ভূত্যেরা মশাল ধরিয়া তাহার সঙ্গে যাইত। ফুল তুলিয়া তিনি গঙ্গাস্বান করিতে ধাইতেন। গঙ্গার ঘাটে বসিয়া বেলা দুই দণ্ড পৰ্য্যন্ত তিনি জপ, গঙ্গা পূজা ও শিবপূজা করিতেন তারপর অনেকগুলি দেবালয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়া গৃহে আসিতেন। গৃহে জাসিয়া পুরাণপাঠ শ্রবণ ও ইষ্ট পূজা করিতে বেলা দুই প্রহর অতীত হইয়া যাইত। আহ্নিকাদি করার পর তিনি স্বহস্তে পাক করিয়া দশজন ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইতেন। পরে পরিবারস্থ অন্তান্ত ব্ৰাহ্মণগণের ভোজনের ব্যবস্থা করিয়া বেলা আড়াই প্রহরের সময় নিজে হবিন্যান্ন গ্রহণ করিতেন। আহারের পর দেওয়ান দপ্তরে আসিয়া কুশাসনে বসিয়া তিনি কৰ্ম্মচারীদিগকে ৰিষয় কৰ্ম্মের আজ্ঞা দিতেন। তখন তাহার রাণীর আদেশ লিথিয় লইতেন। অপরাহে রাণী আবাব পুরাণ শ্রবণ করিতেন। র্তাহার পাঠশ্রবণ শেষ হইলে কৰ্ম্মচারীগণ তাহার নিকট আসিয়া আজ্ঞাপত্রে তাহার সহি লইয়া যাইত। সন্ধ্যাকালে তিনি গঙ্গায় যাইয়া ঘৃতপ্রদীপ ভাসাইতেন। সন্ধ্যার পর চারি দণ্ড মালা জপ করিতেন। তৎপরে কিছু জলযোগ করিয়া আবার দেওয়ান দপ্তরে আসিয়া বসিতেন। রাত্রি এক প্রহরের সময় তিনি প্রজাদের আবেদন নিবেদন শ্রবণ করিতেন। অবশেষে পরিবারস্থ সকলের খোজ খবর লইয়া তিনি রাত্রি দেড় প্রহরের সময় বিশ্রাম করিতে যাইতেন। এইরূপ কঠোর পরিশ্রম করিয়া রাণী ভবানী তাহার বিশাল রাজ্যে শৃঙ্খলা রক্ষা করিতেন। ま রাণী ভবানীর দানের কথা বাঙ্গল দেশে প্রবাদের স্তায় প্রচলিত। তিনি অসংখ্য দেবমন্দির શ૧ મારો ન নিৰ্ম্মাণ করাইয়া চতুষ্পাঠী স্থাপন করাইয়া ও সহস্ৰ সহস্ৰ দরিত্রকে অন্ন দান করিয়া বাঙ্গলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হইয়া আছেন। র্তাহার মাত জয়দুর্গার স্থতিরক্ষার্থ ছাতানী গ্রামে তিনি এক স্বর্ণময়ী জয়দুর্গ মূৰ্ত্তি ওমন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন। "মাতৃভক্তির সঙ্গে দেবউক্তির এইরূপ অনন্যসাধারণ মুমধুর সমাবেশ ষে দেবমন্দিরকে জগদব্যাপী বিশিষ্টতা দান করিয়াছিল, তাছা এখন ধুলিবিলুষ্ঠিত। কিন্তু জয়দুর্গ এখনও রাণী ভবানীর প্রশংসনীয় ব্যবস্থায় সেবাপুজা লাভ করিয়া আলিতেছেন।” কাশীতে র্তাহার কীৰ্ত্তি সম্বন্ধে ঐযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্র মহাশয় ১৩০৪ সালের “সাহিত্য” পত্রিকায় লিথিয়াছেন—"নিজ কাশীতে নিত্য প্রাতঃকালে এক প্রস্তরের চৌবাচ্চাতে আট মন ছোল ডিজান যাইত, তাহ অনাহূত ৰে সকল লোক আগত হইত তাহাদিগকে দেওয়া যাইত এবং অন্নপূর্ণার মন্দিরে নিত্য নিত্য ২৫ মণ তণ্ডুল বিতরণ হইত। কাশীধামে তিনি প্রায় শত দেবমন্দির, অতিথিশালা ও ধৰ্ম্মশালা নিৰ্ম্মাণ করিয়া গিয়াছেন। রাণী ভবানী এই সকল সেবাপূজার জন্য যে অর্থ ও ভূমিদান করিয়া গিয়াছিলেন, তাহার নিদর্শন অদ্যাপি নাটোরে দেখিতে পাওয়া যায়। শুামরায়ের সেবা এখনও মুর্শিদাবাদ প্রদেশে সৰ্ব্বজনপরিচিত।” জীবন যাপন প্রণালী