পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sq8 বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী । চৈতন্যভাগবত গ্ৰন্থ পাঠ করিতেন। চৈতন্যভাগবতে চৈতন্যদেবের অন্তলীলা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয় নাই। বৈষ্ণবগণ সেই সংক্ষিপ্ত বিবরণে তৃপ্তিলাভ করিতে পারিতেন না। ১৬০৫-৬ খৃঃ অব্দে একদা বৈষ্ণবমণ্ডলী এইরূপ সমবেত হইয়াছেন, শুভ্ৰকেশ পরমভাগবত কৃষ্ণদাস কবিরাজ তথায় উপস্থিত আছেন, এমন সময় গোবিন্দ গোস্বামী, যাদবাচাৰ্য্য গোস্বামী, ভূগর্ভ গোস্বামী, কুমুদানন্দ চক্ৰবৰ্ত্তী, শিবানন্দ, চৈতন্যদাস প্রমুখ বিশিষ্ট বৈষ্ণবগণ বৃদ্ধ কবিরাজকে চৈতন্যদেবের অন্তলীলার বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতে অনুরোধ করিয়া বসিলেন । অশীতিপর বৃদ্ধ নিৰ্ব্বাণপ্ৰায় জীবনদীপ পলিতােকশ লােলচৰ্ম্ম কম্পিত-হস্ত ক্ষীণদৃষ্টি কৃষ্ণদাস বিষয়ের গুরুত্ব এবং তঁহার শারীরিক অবস্থা বুঝিয়া ইতস্ততঃ করিতেছেন এমন সময়, গোবিন্দজীর আদেশম্বরূপ তাহার আদেশমালা আনিয়া পূজারী তাহার হস্তে দিলেন । ভক্ত বৈষ্ণব গোবিন্দজীর আদেশ বলিয়া তাহা শিরোধাৰ্য্য করিলেন এবং প্রধানতঃ চৈতন্যভাগবত চৈতন্যচন্দ্ৰোদয়নাটক, স্বরূপদামোদর ও মুরারিগুপ্তের কড়চা অবলম্বনে এবং রঘুনাথদাস, লোকনাথ গোস্বামী ও গোপালভট্ট প্ৰভৃতি বিশেষজ্ঞ বৈষ্ণবাচাৰ্য্যগণের নিকট শ্রবণ করিয়া অসাধারণ অধ্যবসায় এবং যৌবনের শক্তি লইয়া চৈতন্যদেবের আদি মধ্য ও অন্তলীলার প্রামাণিক ইতিবৃত্ত লিখিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন । ৮৫ বৎসর বয়সে র্তাহার সেই সময়ের অবস্থা তাহারই দ্বারা ব্যক্তি হইয়াছে যথা “আমি লিখি ইহা মিথ্যা করি অনুমান। আমার শরীর কাষ্ঠপুতলী সমান ৷ বৃদ্ধ জরাতুর আমি অন্ধ বধির। হস্তহালে মনোবৃত্তি নহে। আর স্থির ॥ নানা রোগগ্ৰস্ত চলিতে বলিতে না পারি। পঞ্চারোগ পীড়া ব্যাকুল রাত্ৰিদিন মারি ॥” চৈঃ চিঃ । তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্য সহকারে ৬০ খানি সংস্কৃত গ্ৰন্থ হইতে র্তাহার উক্তির সমর্থক শ্লোকাবলী উদ্ধৃত করিয়া ১২০৫১ শ্লোকে ৯ বৎসর পরিশ্রম করিয়া গ্ৰন্থখানি সম্পূর্ণ করেন। বাঙ্গালা গ্ৰন্থ লিখিতেও সংস্কৃতে অদ্বিতীয় পণ্ডিত বহুস্থানে শ্লোকগুলি সংস্কৃতভাষাতেই লিখিয়া গিয়াছেন এবং প্রায় সারাজীবনটাই ব্ৰজমণ্ডলে বাস করিয়া ব্ৰজবাসীর হিন্দী ভাষারও বহুল প্রয়োগ করিয়া বসিয়াছেন।