পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

òNSV) বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী । বিস্ময়ে মগ্ন হইলেন। এবং কুঞ্জে ফিরিয়া আসিয়া নিবিষ্ট মনে আত্মচরিত্রানুশীলন ও ত্রুটি অনুসন্ধান করিতে করিতে বলিয়া উঠিলেন “বুঝিয়াছি। যথার্থই আমার দীক্ষা গ্রহণে বিলম্ব আছে। ভগবদ্ভক্তির ঘোর প্রতিবন্ধক, হৃদয়ের প্রধান মালিন্য অহঙ্কার এখনও আমার সমস্ত হৃদয় জুড়িয়া বসিয়া আছে। আমার ঠাকুরবাড়ী, আমার ব্যয়সম্পন্ন প্ৰসাদ ভোজন করি, ইত্যাদি “আমার” এই জ্ঞান ত যায় নাই, আমাকে ধিক্‌!” লালাবাবু তন্মুহূৰ্ত্ত হইতে মাধুকরী বৃত্তি অবলম্বন করিয়া কুঞ্জে কুঞ্জে এক এক মুষ্টি ভিক্ষা লইয়া দিনান্তে তাহাই ভোজন করিতে লাগিলেন। হৃদয় হইতে যখন অহং বুদ্ধি এককালে অন্তষ্ঠিত হইল তখন এক দিবস ধীরে ধীরে বাবাজীর দ্বারে উপস্থিত হইলেন এবং তঁহার চরণে দীন নয়ন অৰ্পণ করিয়া অধোবাদনে স্বীয় অভিপ্ৰায় পুনরায় ব্যক্তি করিলেন । এবার ভাবিয়াছিলেন বাবাজী নিশ্চয়ই তঁহাকে কৃপা করিবেন। বাবাজী তাহার অধিক সমােদর করিয়া পূৰ্ব্বাপেক্ষা মধুরভাবে ও মৃদুবচনে বলিলেন “বাবা তোমার দীক্ষা গ্রহণে এখনও একটু বিলম্ব আছে।” লালাবাবু স্তম্ভিত হইয়া চিত্ৰপুত্তলিকার ন্যায় কুটীর প্রাঙ্গণে দাড়াইয়া অবিরল ধারে অশ্রুবিসর্জন করিতে লাগিলেন। অনন্তর ভগ্ন হৃদয়ে কুঞ্জে ফিরিয়া আসিয়া প্ৰগাঢ় চিন্তায় মগ্ন হইলেন। এবং একে একে স্বীয় অপরাধ অন্বেষণ করিতে লাগিলেন। “আমি স্ত্রী, পুত্ৰ, ধন, সম্পদ, সমস্ত ত্যাগ করিয়া শ্ৰীবৃন্দাবনের তরুতল আশ্রয় করিয়াছি; মাধুকরী ব্ৰত ধারণ করিয়া দিনপাত করিতেছি, হরিপাদপদ্মে চিত্ত সমৰ্পণ করিয়া অষ্টপ্রহর ভগবানের নাম লইতেছি বটে, কিন্তু আমার মনের মলিনতা ত এখনও দূর হয় নাই ! কৈ শেঠ বাবুদের কুঞ্জে মাধুকরী ভিক্ষা করিতে যাইতে ত পারি নাই! এখনও তা শত্রুর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষবুদ্ধি বেশ প্রবল রহিয়াছে, তবে আর আমার মন বিশুদ্ধ হইল কৈ ? শত্ৰু, মিত্র, মান, অপমান, ভেদজ্ঞান এত প্ৰবল থাকিতে অহঙ্কার বুদ্ধি কি প্রকারে যাইবে ? এই গুণে আমি বাবাজীর কৃপা প্রার্থী হইতে গিয়াছিলাম ! ধন্য বাবা কৃষ্ণদাস, ধন্য তোমার মহিমা ! তোমার মহিমার অন্ত নাই, তুমিই আমাকে তোমার দাসের যোগ্য করিতেছ।” যে শেঠ বাবুদের নাম ইতিপূর্বে উল্লিখিত হইল, র্তাহারা জয়পুরের মহাধনী জমিদার এবং মহাভক্ত। বৃন্দাবনে তঁহাদের প্রকাণ্ড ঠাকুরবাড়ী ও সেবা আছে। তঁহাদের ঐশ্বৰ্য্যের পরিসীমা নাই। মথুরা এবং সন্নিহিত স্থানে তঁহাদের