পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QS 8 বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী । উচ্চাভিলাষের সহিত অধ্যবসায়, একাগ্রতা ও সাধুতার মিলন হইলে যে ভাগ্যবিপৰ্যয় অতিক্ৰম করিয়া এবং দারিদ্র্যের শত বন্ধন ছিন্ন করিয়া আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করা যায়, প্রবাসী বাঙ্গালী বাবু যমুনাদাস বিশ্বাস তাহা দেখাইয়া গিয়াছেন। তিনি হাবড়া জেলার অন্তঃপাতী অাদুল-বিপ্ৰোণাপাড়ানিবাসী শ্ৰীযুক্ত বলরাম দাস বিশ্বাস মহাশয়ের জ্যেষ্ঠপুত্র। র্তাহার। পূৰ্ব্বপুরুষগণের অনেকে মুর্শিদাবাদ নবাবসরকারে কৰ্ম্ম করিতেন। তঁহারা নবাবের বিশ্বস্ত কৰ্ম্মচারী ছিলেন বলিয়া “বিশ্বাস” এই পদবী লাভ করেন । তদবধি তাহারা “বিপ্ৰোণার বিশ্বাস” বলিয়া খ্যাত । বলরাম দে মহাশয় ইংরেজী ও পারস্য ভাষায় বিশেষ বুৎপন্ন ছিলেন। তিনি তাহার খুল্লতাতগণের ন্যায় নবাবসরকারে কৰ্ম্মগ্রহণ না করিয়া ইংরেজ সরকারে রাজস্ব বিভাগে নিযুক্ত হন এবং সেই সুত্রে জন্মস্থান ত্যাগ করিয়া আলিগড় প্রবাসী হন। তিনি উত্তর-পশ্চিমের নানা স্থান ভ্ৰমণ করিয়াছিলেন। কিন্তু আগ্রা ও সাহারণপুরেই অধিকাংশকাল অবস্থিতি করিতেন। বাবু যমুনাদাসের জীবনের সহিত এই দুই প্রবাসস্থানই অধিক ঘনিষ্ঠভাবে সম্বদ্ধ। ১৮৪১ অব্দে যখন বলরাম বাবু আগ্রার ‘ভৈরে বেলনগঞ্জ” পাড়ায় অবস্থিতি করিতেছিলেন তখন যমুনাদাস বাবুর জন্ম হয়। তাহার পরেই সাহারাণপুরে তিনি বদলি হন । তথায় তঁাহার দুই কন্যা ও দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়। কনিষ্ঠ পুলের বয়স যখন পাঁচ বৎসর মাত্র তখন বলরাম বাবুকে কৰ্ম্মসুত্রে রুড়কী যাইতে হয়। রুড়কীতে আসিয়া হঠাৎ তিনি পীড়িত হন এবং পরিবারবর্গকে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় রাখিয়া পরলোক গমন করেন। যমুনাদাস বাবু তখন ১২ বৎসরের বালক । সে সময় তঁহাদের কয়েকজন আত্মীয় আগ্ৰায় বাস করিতেছিলেন। সুতরাং বলরাম বাবুর পরিবারবর্গ আর বঙ্গদেশে ফিরিয়া না গিয়া আগ্রাতেই রহিলেন । সাহারাণপুরে অবস্থান কালে যমুনাদাস বাবুর শিক্ষা আরম্ভ হয়। এইস্থানেই তিনি মৌলবীর নিকট পারস্য ভাষা শিক্ষা করিতে থাকেন। আগ্ৰায় আসিয়া কলেজে ভৰ্ত্তি হন; কিন্তু উপযুক্ত অভিভাবকের অভাবে তাহার লেখাপড়ার বড় সুবিধা হয় নাই । তিনি ব্যায়াম ও সঙ্গীত বিদ্যায় অধিক মনোনিবেশ করায় তাহাতে বিশেষ নিপুণতা লাভ করিয়াছিলেন। যমুনাদাস বাবুর বয়স যখন ১৪ বৎসর তখন সিপাহীবিদ্রোহ হয়। সেই ভয়ানক দুর্দিনে লোকে গৃহের বাহিরে।