পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুমায়ু বিভাগ এবং উত্তরাখণ্ড । &Sv) সরকারী কাৰ্য উপলক্ষ্যে অনেক বাঙ্গালীকে এখানে পাঁচ ছয় মাসের জন্য প্ৰতি বৎসরই আসিতে হয়। কেহ কেহ বায়ুপরিবর্তনের জন্যও আগমন করেন। সামরিক বিভাগের একটী দপ্তর বার মাস এখানেই থাকা হেতু কতিপয় বাঙ্গালীকে স্থায়ীভাবে এখানে অবস্থান করিতে হয়। স্থানীয় জমীদারবর্গের অগ্ৰণী রায় বাহাদুর কৃষ্ণসা’র বংশধরগণের শিক্ষার জন্য জনৈক বাঙ্গালী যুবক নয়নীতাল প্ৰবাসী হইয়াছেন। খাস নয়নীতালে বাড়ী ঘর করিয়া কোন বাঙ্গালীই এ পৰ্যন্ত স্থায়ী হন নাই। কিন্তু প্ৰবাসী বাঙ্গালীর বিশেষ যত্ন চেষ্টা ও অর্থসাহায্যে প্ৰতিষ্ঠিত নয়নীতালের “এ্যাংলো ভাৰ্ণাকুলার স্কুল”টী বাঙ্গালীর নাম এখানে চির জাগরূক রাখিবো। প্ৰতিষ্ঠাতার একখানি প্ৰতিকৃতি বিদ্যালয়গৃহে সযত্নে রক্ষিত হইয়াছে। নয়নীতালের “শৈল সাহিত্য সমিতি” প্রবাসী বাঙ্গালীর মাতৃভাষানুরাগের নিদর্শন স্বরূপ বর্তমান রহিয়াছে। নয়নীতাল হইতে সাত মাইল দূরে গর্গাচল উপত্যকায় ভওয়ালী নামে একটী গ্ৰাম আছে। উহা নানা কারণে নয়নী তাল-প্রবাসী বাঙ্গালীদিগের আকর্ষণের স্থল। বাঙ্গালী-গৌরব শ্ৰীমৎ সোহহং স্বামীর আশ্রম এই স্থানে অবস্থিত। এই আশ্রমের অনতিদূরবর্তী পূতসলিলা গিরিনদীর তটভূমি হিন্দুদিগের চির-বিশ্রামের স্থল। সোহহং স্বামী এই শ্মশানের অধিষ্ঠাতা দেবতার দুষ্ঠায় অবস্থিতি করিয়া মৃতের সৎকারে সর্বপ্রকার সহায়তা করিয়া থাকেন। র্তাহার আশ্রম শোকাৰ্ত্তের শান্তিস্থল। এই ভওয়ালীর পথ দিয়াই বন্দ্রীনাথ, কেদারনাথের যাত্ৰিগণ গমনাগমন করিয়া থাকেন। সম্মুখে বিশালবপু গৰ্গাচলশ্রেণী অভ্ৰভেদ করিয়া দণ্ডায়মান। ইহারই এক স্থানে মহামুনি গর্গের আশ্রম ছিল। তাহার পদরেণু মাখিয়া এই শৈলভূমি চিরপবিত্র হইয়া রহিয়াছে; শত শত বর্ষের বারিপাতেও তাহা যে, বিধৌত করিতে পারে নাই। এই গর্গাচল-পাদমূলে বিবিধ বন্যবৃক্ষ, লতাগুল্ম এবং অরণ্য-পুষ্পতরুশোভিত ক্ষুদ্র শৈলীরাজীপরিবেষ্টিত একটী উপত্যকাভূমি আছে। উপত্যকাভূমিতেই ফলপুষ্পোন্তানসংলগ্ন বাঙ্গালী সন্ন্যাসীর আশ্রম রহিয়াছে। ইহার চতুর্দিকে অভ্ৰভেদী পর্বতমালা, বিশাল বিটপিশ্রেণী, নিবিড় বনরাজী এবং তাহার অনতিদূরে কল,নাদিনী গিরিনদী ও নিঝরিণীসমূহ বিরাজিত। আমরা সেই চির-নবীন চিরবিস্ময়োৎপাদিকা, নয়নের চিরতৃপ্তিদায়িনী মনোমোহিনী প্ৰকৃতি সতীর সৌন্দৰ্য্য-জগতে প্ৰবেশ করিয়া ক্ষণকালের জন্য আত্মহারা উদ্দেশ্যহার হইয়া ইতস্ততঃ বিচরণ করিতেছিলাম।