পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৬ বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী । বীরচন্দ্ৰ মাণিক্য বাহাদুর যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন শ্যামাকান্ত বাবু তঁাহার প্রগাঢ় স্নেহ হইতে কখনও বঞ্চিত হন নাই। কৰ্ম্মত্যাগের পর যখনই তিনি ব্যাভ্রাদির ক্রীড়াব্যপদেশে ত্রিপুরায় গিয়া রাজার সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছেন, তখনি মহারাজ তঁহাকে সমাদর ও বহু পারিতোষিকদানে সন্তুষ্ট করিয়াছেন। কতবার রাজা তঁহাকে ভীষণ আশঙ্কাজনক কৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া তঁহার নিকট অবস্থান করিতে পরামর্শ দিয়াছেন। ত্রিপুরা ত্যাগ করিয়া তিনি বরিশাল গবর্ণমেণ্ট স্কুলে ব্যায়াম-শিক্ষক হন এবং সেই সময় হইতেই সার্কাসের আয়োজন করিতে থাকেন। প্ৰথম অবস্থায় সার্কাস করা তাহার পিতার মতবিরুদ্ধ ছিল এবং বিপদের সম্ভাবনা আছে বলিয়া আত্মীয় বন্ধু সকলেই এই কাৰ্য্যের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তিনি সকলের মত অগ্ৰাহা করিয়া অষ্টাদশ বর্ষকাল ঐ কাৰ্য্যেই ক্ষেপণ করেন। সৰ্ব্বপ্রথম তিনি শ্ৰীহট্টজেলাস্থ সুনামগঞ্জ নামক স্থানে একটা বন্যব্যাস্ত্ৰ ( চিতা ) ক্রয় করেন। অহিফেন বা অন্য কোন মাদকদ্রব্য প্রয়োগ দ্বারা ব্যাস্ত্ৰ বশ করা তাহার নিয়মবিরুদ্ধ ছিল । তিনি জোর জবরদস্তি করিয়া সেই বাঘটাকে বশ করিয়া দুই মাসের পরই সুনামগঞ্জে তাহার সহিত ক্রীড়াপ্ৰদৰ্শন করেন। ব্যাস্ত্ৰক্ৰিীড়ায় এই তাহার প্রথম উপ্তম। ঐ বাঘটাকে বশ করিতে র্তাহাকে বহুবার নখ ও দস্তাঘাতে ক্ষত বিক্ষত হইতে হইয়াছিল। ক্রমে র্তাহার সাহস ও অভিজ্ঞতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ বন্যব্যাস্ত্ৰ সকলও অতি অল্প সময়ের মধ্যে বশীভূত হইতে লাগিল এবং তঁহার এমনি শক্তি জন্মিল যে, সিংহ বাস্ত্র ও যে কোন হিংস্ৰ জন্তুর পিঞ্জর মধ্যে অমান বদনে প্ৰবেশ করিয়া অসন্ধুচিতচিত্তে তাহার সহিত ক্রীড়া করিতে লাগিলেন। জয়দেবপুরের রাজা একটা সুন্দরবনের বড় বাঘ ( বেঙ্গল টাইগার ) ধৃত করেন। ঐ ব্যাস্ত্ৰ তিনি শুrামাকান্ত বাবুকে তাহার শক্তি ও সাহসের পুরস্কার স্বরূপ দান করেন। পাটনার নবাবের সদ্যোধুত প্ৰকাণ্ড বাঘিনীর সহিত মল্লযুদ্ধ প্রভৃতি বহুল ক্ষেত্রে র্তাহার অকুতোভয়তা ও শারীরিক শক্তির কথা সাময়িক সংবাদপত্রাদিতে সৰ্ব্বদাই প্ৰকাশিত হইত। সুতরাং তৎসম্বন্ধে পুনরুল্লেখ নিম্প্রয়োজন। একবার তিনি দানাপুর ও আরার মধ্যস্থলে মেলািট্রণে তিন জন গোরাকে এককালে মল্লযুদ্ধে পরাস্ত করিয়া এক মুন্সেফের পত্নীর সতীত্বরক্ষা করেন। সে সময়ের ইংরেজী ও বাঙ্গালা সংবাদপত্রে ইহার বহুল প্রচার হেতু অনেকেই তাহা বিদিত আছেন।