পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৩৬ বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় । ডাকিতে পারে না এবং জন্ম-অন্ধ জনেহ কুন দিন নবীন নীল মেঘর বর্ণ দেখে নহে সে কি প্রকার মনে মনে নবীন নীল মেঘর বর্ণ চিন্তা করিব এখন সত্য বুঝিলাম জন্ম-অন্ধ জনে কখন নবীন নীল মেঘের বর্ণ মনে মনে চিন্তা করিতে পারে না। সাধু জিজ্ঞাসেন তাহা তুমি কি প্রকার কহিয়াছিলা কর্ণাদি পঞ্চ জ্ঞান-ইন্দ্রিয়ে বিনেহ কেবল মনে মনে পরমেশ্বর শ্ৰীকৃষ্ণাদিকে জ্ঞান করা যাএ। যদি জন্ম অবধি অশ্রোতা জনে ক খ আদি অক্ষর পাঠ করিতে পারে না ও পিতা মাতা বন্ধু বান্ধবদিগের নাম করিয়া ডাকিতে পারে না এবং জন্ম-অন্ধ জনেহ মনে মনে নবীন নীল মেঘ বর্ণ চিন্তা করিতে পারে না। অতএব অজ্ঞানী জনেহ পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে জ্ঞান করিতে পারে না এখন তুমি সত্য কহ তুমি অজ্ঞান তুমার ঠাঞি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ সত্য কি মিথ্যা । অজ্ঞানী জীবে কহেন আমি অজ্ঞানী কখন ঐ পরমেশ্বর শ্ৰীকৃষ্ণর মুখের শব্দ আমার কর্ণে শুনি নাই এবং আমার চৰ্ম্মেতেহ তাহান স্পর্শ পাই নাই এবং আমার চক্ষেতেহ তাহান শরীরে রূপ দেখি নাই এবং আমার জিহাতেহ তাহান প্রসাদের রস পাই নাই এবং আমার নাসিকাতেহ তাহান শরীরের গন্ধ পাই নাই অতএব এখন সত্য বুঝিলাম আমি অজ্ঞানী আমার ঠাঞি পরমেশ্বর শ্ৰীকৃষ্ণ মিথ্যা। সাধু জিজ্ঞাসেন তুমি পূৰ্ব্বে শুনিয়াছিলায় পরমেশ্বরের মুখ হৈতে বেদাদি শাস্ত্র জন্মিয়াছে এবং সেই বেদাদি শাস্ত্র ধৰ্ম্ম অধৰ্ম্ম কহিয়াছে সেই বেদাদি শাস্ত্র মিথ্যা কি সত্য তাহ কহ । অজ্ঞানী জীবে কহেন যখন আমার ঠাঞি পরমেশ্বর শ্ৰীকৃষ্ণ মিথ্যা হইয়াছেন এখন বুঝিলাম ঐ বেদাদি শাস্ত্র মিথ্যা হইয়াছে এবং বেদাদি শাস্ত্রের ধৰ্ম্ম অধৰ্ম্ম মিথ্যা হইয়াছে এবং ঐ শাস্ত্রেতেই লিখিয়াছেন যে ব্ৰাহ্মণাদির ধৰ্ম্মহ মিথ্যা এবং পিতৃ মাতৃ আদিহ মিথ্যা এবং আমিহ মিথ্যা এবং আমার কথাহ মিথ্যা। এখন আপনার প্রমুখের কথা শুনিয়া আপনার শ্ৰীচরণ-নিকটে আমি নিঃশব্দ হইলাম। সাধু জিজ্ঞাসেন এই সংসারের লোক কেমন হৈলে নিঃশব্দ হয় তাহা কহ। অজ্ঞানী জীবে কহে ঐ সংসারের লোক মরিলে নিঃশব্দ হয়। সাধু জিজ্ঞাসেন তুমিহ এখন বাচিয়াছ কি মরিয়াছ তাহা কহ। আজ্ঞানী জীবে কহেন আমি পঞ্চ জ্ঞান-ইন্দ্রিয়ের দ্বারাএ পরমেশ্বর শ্ৰীকৃষ্ণকে জ্ঞান করিতে না পারিয়া মরিয়াছি। সাধু কহেন এখন তোমার অজ্ঞান-জন্মের মরণ হৈল এবং অজ্ঞান-জন্মের শাস্ত্রাদিহ বিস্তৃতি হৈল। পরে সেই সাধু কৃপা করিয়া সেই অজ্ঞান জনকে চৈতন্ত করাইয়া পুনর্জন্ম করাইয়া নিত্যবেদাদি পাঠ করাইয়া পরে সেই নিত্য বেদাদি শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ জানাইলেন পরে সেই সাধু অজ্ঞান জনের অনিত্য পঞ্চ ভূতের অনিত্য শরীরকেছ নিত্য নিত্য জানাইয় এবং জগৎ সংসারের মনুষ্যাদি পশু পক্ষী