পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মৃত্যুঞ্জয়ের প্রবোধ-চন্দ্রিকা—১৮১৩ খৃঃ। ১৭০৭ অন্ত জন কহিল এমন হবে না থাক আমি গণিয়া দেখি এরূপ কহিয়া সেও স্বভিন্ন নয় লোককে সংখ্যা করিয়া সশঙ্ক হইয়া কহিল যে বটে ত নয় জনই যে হয় দশম কি হইল। এইরূপে দশ জন একে একে আত্মবিস্মরণে বাহমাত্রাভিনিবিষ্ট চিত্ততাতে কেবল বাহাগণনা করিয়া দশম নাই এই নিশ্চয় করিল। অনন্তর সকলেই হাত তুলিয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিল ওহে দশম কোথা আছ শীঘ্র আইস আমরা সকলেই তোমাকে না পাইয়া বড়ই ব্যাকুল হইতেছি তোমাকে পাইলেই সুখী হই অতএব যেথা থাক শীঘ্র আইস। এই রূপ পুনঃ পুনঃ আহবান করিয়া কিছুই উত্তর না পাইয়া পুনরায় সকলে যুক্তি করিয়া এই নিষ্কৰ্ষ করিল যে আমাদের সঙ্গে পরিহাস করিয়া এই বনে লুকাইয়া আছে। চল সকলে বনের মধ্যে গিয়া তত্ত্ব করি। শুালা বড় দুষ্ট যদি পাই তাহার ৰাপের বিয়া দেখাইব আমাদিগের বড় দুঃখ দিতেছে ভাল বুঝিব। ইহা কহিয়া সকলেই কণ্টকিত নানা জাতীয় লতা বেষ্টিত নিবিড় বিপিন মধ্যে প্রবিষ্ট হইল পরে সেই অরণ্যে গাছের আড়ে কুঞ্জ মধ্যে পৰ্ব্বত উপত্যকাতে অধিত্যকাতে কন্দরে গুহাতে সৰ্ব্বত্র অন্বেষণ করিয়া কোথাও কিছু তত্ত্ব না পাইয়া পুনৰ্ব্বার সকলেই ঐ নদীতীরে আসিয়া মন্ত্রণা করিল যে বুঝি নদী পার হইতে হইতে ডুবিয়া মরেছে আইস দেখি খুজি। ইহা মনে করিয়া নদীর মাঝে খুজিয়া কোথায়ও কিছু টের না পাইয়া পাক কাদা শেওলা মাথা গায়ে নদীর পাড়ে বসিয়া । আৰ্ত্তস্বরে রোদন ও গদগদ কণ্ঠে কাকুক্তি বিলাপ করিয়া কেহ বা বুক চাপড়ায় কেউ বা মাথা কুঁড়ে কেহ বা ধূলাতে গড়াগড়ি পাড়ে কেহ বা আছাড় খাইয়া পড়ে। ইতি মধ্যে আত্মদর্শী নামে একজন তথাতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন তাহদের দুরবস্থা দেখিয়া অত্যন্ত করুণান্বিত হইয়া তাহাদিগকে জিজ্ঞাসিলেন তোমরা এ দুর্দশাগ্রস্ত কি কারণে হইয়াছ তাহা আমাকে কহ। ইহা শুনিয়া তাহারা আছোপান্ত সকল বৃত্তান্ত কহিল। তদনন্তর আত্মদর্শী বিবেচনা করিয়া বুঝিলেন যে ইহারা সকলেই আত্মবিস্তৃত। আত্মস্বরূপ বিস্মরণ সৰ্ব্বানর্থের নিদান হয়। ধন্ত জগন্মোহিনী পারমেশ্বরী শক্তি যে আত্মজ্ঞানাধীন সৰ্ব্ব বিজ্ঞান হয় সে স্বয়ং প্রকাশমান আত্মাকেও বিস্মৃতি করান। আহ এ জীবেরা আত্মাকে ভুলিয়া না গুণিয়া এতাদৃশ দুঃখ পাইতেছে। ইহা মনে মনে করিয়া কহিলেন যে হে আত্মবিস্কৃতের উঠ মোহ শোক রোদন ত্যাগ কর তোমাদের দশম মরে নাই আছে আমি দেখাইয়া । দিতেছি স্থির হও অন্তঃকরণ সুস্থ কর। আত্মদর্শীর এই বাক্য । শুনিয়া আত্মবিস্মৃতের আস্তে বাস্তে উঠিয়া কহিলেন কই কই আমাদের