পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসহন্দরী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ। তখন আমরা কি পৰ্য্যন্ত বিপদগ্ৰস্ত হইলাম তাহা বলা যায় না। আমরা আতঙ্কে কঁাপিতে লাগিলাম। নদীর কুলে যে স্থানে আমরা আছি সে স্থান সমুদয় শ্মশান। খাট গদি বালিস চাটাই বঁাশ কাঠ ইত্যাদি সকল ভিন্ন ভিন্ন হইয়া পড়িয়া আছে। তন্মধ্যে আমরাই তিন জন ভিন্ন আর লোক নাই। ইতিমধ্যে দাদা বলিলেন দেখিতেছি এ সকল শ্মশান মড়ার বিছানা পড়িয়াছে। ঐ মড়ার নাম শুনিবা মাত্র আমার অত্যন্ত ভয় হইল। সে ভয় যেন হা করিয়া আমাদের গ্রাস করিতে আইল এই মত জ্ঞান হইতে লাগিল । আমরা তিন জনে প্রাণপণে কাদিতে লাগিলাম। এই সময়ে আমার মনে হইল মা বলিয়াছেন ভয় হইলে দয়ামাধবকে ডাকিও। তখন আমি বলিলাম দাদা দয়ামাধবকে ডাক । তখন আমরা তিন জন দয়ামাধব দয়ামাধব বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিলাম। আর কাদিতে লাগিলাম। তখন আমাদের কান্না যে কেহ শুনিবে এমন স্থান নহে। এদিকে নদী ওদিকে প্রজ্বলিত অগ্নির ভীষণ ধ্বনিতে কর্ণ বধির হইতে লাগিল। মনুষ্যের কলরব এবং পরস্পরের কান্নায় পরস্পরে দুঃখ সমুদ্রে নিমগ্ন হইতে লাগিল। তখন আমাদের কান্না কে শুনে। যেখানে আমরা আছি সেখানে মনুষ্যের সমাগম নাই। তখন আমাদের যে কি প্রকার ভয় উপস্থিত হইল তাহ বলিতে পারি না। তখন আমরা তিন জনে ভয়ে কান্দিতে কান্দিতে মৃতপ্রায় হইলাম। আমাদের র্কাপিতে কঁাপিতে এই মাত্র ধ্বনি মুখে ছিল দয়াময় দয়াময় ! ঐ নদীর অপর পারে কয়েক ঘর লোকের বসতি। তাহার কয়েক জন ঐ আগুন দেখিয়া এ পারে আসিতেছে। ঐ নদীর এক জায়গায় অল্প জল ছিল তাহারা সেই জায়গা দিয়া হাটিয়া পার হইল। পরে এ পারে আসিয়া আমাদের কান্না শুনিয়া একজন বলিল এ নদীর কুলে কাহার ছেলের কান্না শুনি । আর একজন বলিল ওরে এ রায় মহাশয়দের বাটতে আগুন লাগিয়াছে এ বুঝি তাহদের বাটীর ছেলেরা কাদিতেছে। এই বলিয়া ভয় নাই ভয় নাই বলিতে বলিতে আমাদের নিকটে আসিয়া আমাদের তিন জনকে কোলে লইয়া ঐ আগুন দেখিতে চলিল । এদিকে আমাদিগকে না দেখিয়া আগুনে পুড়িয়া মরিয়াছে বলিয়া সকলে হাহাকার শব্দ করিতেছে এবং আমাদের বাটীর সকলে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়া কাদিতেছেন। এমত সময়ে ঐ কয়েকজন লোক ›ፃፃ »