পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মহর্ষির জীবনী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ। ১৭৯৯ সেই আনন্দের অভাবে ঘন বিষাদ আসিয়া আমার মনকে আচ্ছন্ন করিল। কিরূপে আবার সেই আনন্দ পাইব তাহার জন্য মনে বড় ব্যাকুলত জন্মিল। আর কিছুই ভাল লাগে না। এ স্থলে ভাগবতের একটা উপাখ্যানের সহিত আমার অবস্থার তুলনা হইতে পারে। নারদ বেদব্যাসের নিকট আপনার কথা বলিতেছেন,—“আমি পূৰ্ব্ব জন্মে কোন এক ঋষির দাসী-পুত্র ছিলাম। ঐ ঋষির আশ্রমে বর্ষার কয়েক মাস অনেক সাধুলোক আশ্রয় লইতেন। আমি তাহাদের শুশ্ৰষা করিতাম। ক্রমশঃ আমার দিব্য জ্ঞান জন্মিল এবং মনে হরির প্রতি ঐকান্তিকী ভক্তির উদয় হইল। পরে ঐ সমস্ত সাধু আশ্রম হইতে বিদায় লইবার কালে কৃপা করিয়া আমাকে জ্ঞান-রহস্ত শিক্ষা দিয়া যান। ইহা দ্বারা আমি হরি-মাহাত্ম্য সুস্পষ্ট জানিতে পারি। জননী ঋষির দাসী, আমি তাহার একমাত্র পুত্র। "একাত্মজা মে জননী। আমি কেবল র্তাহারই জন্ত ঐ ঋষির আশ্রম ত্যাগ করিতে পারি নাই। একদা তিনি নিশাকালে গো-দোহন করিবার জন্ত বাহিরে যান। পথে একটি কৃষ্ণসপ পাদস্পৃষ্ট হইবামাত্র তাহাকে দংশন করে এবং তিনি পঞ্চত্র প্রাপ্ত হন। কিন্তু এইটা আমি স্বীয় অভীষ্ট-সিদ্ধির বড় সুযোগ মনে করিলাম এবং একাকী ঝিল্লিকাগণনাদিত এক ভীষণ মহাবনে প্রবেশ করিলাম। পৰ্য্যটন-শ্রমে আমার অতিশয় ক্ষুৎপিপাসা পাইয়াছিল। আমি এক সরোবরে স্নান ও জলপান করিয়া ক্লান্তি দূর করিলাম। মন প্রশান্ত হইল। অনন্তর আমি এক অশ্বখ বৃক্ষের তলে গিয়া বসিলাম এবং সাধুগণের উপদেশ অনুসারে আত্মস্থ পরমাত্মাকে চিন্তা করিতে লাগিলাম। মন ভাবে আপ্লুত, নেত্রযুগল বাষ্পপূর্ণ। সহসা হৃৎপদ্মে জ্যোতিৰ্ম্ময় ব্রহ্মের সাক্ষাৎকার লাভ হইল। সৰ্ব্বাঙ্গ পুলকিত হইয়া উঠিল। আমি যার পর নাই আনন্দ পাইলাম। কিন্তু পরক্ষণে আর তাহাকে দেখিতে পাইলাম না। সেই শোকাপহ কমনীয় রূপ দেখিতে ন পাইয়া সহসা গাত্ৰোখান করিলাম। মনে বড় বিষাদ উপস্থিত হইল। পরে আমি আবার ধ্যানস্থ হইয় তাহাকে দেখিবার চেষ্টা করিতে লাগিলাম, কিন্তু আর পাইলাম না। তখন আতুরের হায় অতৃপ্ত হইয় পড়িলাম, ইত্যবসরে সহসা এক দৈববাণী হইল—‘এ জন্মে তুমি আমাকে আর দেখিতে পাইবে না। যাহাদের চিত্তের মল ক্ষালিত হয় নাই, যাহার যোগে অসিদ্ধ তাহারা আমাকে দেখিতে পায় না। আমি যে একবার তোমাকে দেখা দিলাম ইহা কেবল তোমার অনুরাগ বৃদ্ধির জন্য।’” আমার ঠিক এইরূপই অবস্থা ঘটিয়াছিল। আমি সেই রাত্রিকালের আনন্দ না পাইয়া অত্যন্ত বিষণ্ণ হইয়াছিলাম কিন্তু তাহাই আবার আমার ব্যাকুলত । নারদের প্রথম ব্ৰহ্মদর্শন ।