পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মহর্ষির জীবনী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ। ১৮০৩ চতুর্থ পরিচ্ছেদ । এই বিষাদ-অন্ধকারের মধ্যে ভাবিতে ভাবিতে বিদ্যুতের হ্যায় একটা আলোক চমকিত হইল। দেখিলাম, বাহ-ইন্দ্রিয় দ্বারা রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শের যোগে বিষয়-জ্ঞান জন্মে। কিন্তু এই জ্ঞানের সহিত আমি যে জ্ঞাত তাহাও তো জানিতে পারি। দর্শন, স্পর্শন, আঘ্রাণ ও মননের সহিত আমি যে দ্রষ্ট, স্পষ্ট, ভ্রাতা ও মন্ত এ জ্ঞানও তো পাই। বিষয়জ্ঞানের সহিত বিষয়ীর বোধ হয়, শরীরের সহিত শরীরকে জানিতে পারি। আমি অনেক অনুসন্ধানে সৰ্ব্বপ্রথমে এই আলোকটুকু পাই। যেন ঘোর অন্ধকারাবৃত স্থানে স্থৰ্য্য-কিরণের একটী রেখা আসিয়া পড়িল । বিষয়-বোধের সহিত আমি আপনাকে আপনি জানিতে পারি ইহা বুঝিলাম। পরে যতই আলোচনা করি জ্ঞানের প্রভাব বিশ্বসংসারে সৰ্ব্বত্র দেখিতে পাই । আমাদের জন্ত চন্দ্র স্বৰ্য্য নিয়মিতরূপে উদয়াস্ত হইতেছে, আমাদের জন্ত বায়ু বৃষ্টি উপযুক্তরূপে সঞ্চালিত হইতেছে। ইহারা সকলে মিলিয়া আমাদের জীবন-পোষণের একটী লক্ষ্য সিদ্ধ করিতেছে।. এইটা কাহার লক্ষ্য ? জড়ের তো লক্ষ্য হইতে পারে না,–চেতনেরই লক্ষ্য। অতএব একটী চেতনাবান পুরুষের শাসনে এই বিশ্বসংসার চলিতেছে। দেখিলাম, শিশু ভূমিষ্ঠ হইবামাত্র মাতার স্তন্তপান করে, ইহা কে তাহাকে শিখাইয়া দিল ? তিনিই, যিনি ইহাকে প্রাণ দিয়াছেন। আবার মাতার মনে কে স্নেহ প্রেরণ করিল ? যিনি তাহার স্তনে দুগ্ধ দিলেন, তিনি। তিনিই সেই প্রয়োজন-বিজ্ঞানবান ঈশ্বর, যাহার শাসনে জগৎ-সংসার চলিতেছে। যখন এতটুকু জ্ঞাননেত্র আমার ফুটিল তখন একটু আরাম পাইলাম। বিষাদ-ঘন অনেক কাটিয়া গেল। তখন কিছু আশ্বস্ত হইলাম। বহু পূৰ্ব্বে প্রথম বয়সে আমি যে অনন্ত আকাশ হইতে অনন্তের পরিচয় পাইয়াছিলাম, একদিন ভাবিতে ভাবিতে তাহা হঠাৎ আমার মনে পড়িয়া গেল। আবার আমি একাগ্র মনে অগণ্য গ্রহ-নক্ষত্র-খচিত এই অনন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ । আকাশের উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলাম এবং অনন্তদেবকে দেখিলাম, । বুঝিলাম যে অনন্তদেবেরই এই মহিমা । তিনি অনন্তজ্ঞানস্বরূপ, যাহা হইতে আমরা পরিমিত জ্ঞান ও তাহার আধার এই অবয়ব পাইয়াছি, তাহার কোন অবয়ব নাই। তিনি শরীর ও ইন্দ্রিয় রহিত। তিনি হাত দিয়া এ বিশ্ব গড়েন নাই। কেবল আপনার ইচ্ছার দ্বারা এই জগৎ রচনা করিয়াছেন। তিনি কালীঘাটের কালীও নহেন,—তিনি আমাদের বাড়ীর শালগ্রামও নহেন। এই খানেই পৌত্তলিকতার মূলে কুঠারাঘাত পৌত্তলিকতার মূলে কুঠারাঘাত।