নিজের অনেক টাকা,— তাই অর্থের প্রতি নজর দেন নাই, ছেলেটির বিষয়-আশয় আছে কি না, খোঁজ লন নাই, শুধু দেখিয়াছিলেন, ছেলেটি লেখাপড়া করিতেছে, রূপবান্, সৎ সাধুচরিত্র,— ইহাই লক্ষ্য করিয়া মাধবীর বিবাহ দিয়াছিলেন।
এগারো বৎসর বয়সে মাধবীর বিবাহ হইয়াছিল। তিন বৎসর সে স্বামীর কাছে ছিল। যত্ন, স্নেহ, ভালবাসা সবই সে পাইয়াছিল।
কিন্তু যোগেন্দ্রনাথ বাঁচিলেন না। মাধবীর এ জীবনের সব সাধ মুছিয়া দিয়া, ব্রজরাজের বক্ষে শেল হানিয়া তিনি স্বর্গে চলিয়া গেলেন। মরিবার সময় মাধবী যখন বড় কাঁদিতে লাগিল, তখন তিনি মৃদু-কণ্ঠে কহিয়াছিলেন, “মাধবি, তোমাকে যে ছাড়িয়া যাহিতেছি, এইটিই আমার সব চেয়ে দুঃখ। মরি, তাহাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু তুমি যে আজীবন ক্লেশ পাইবে, এইটি আমাকে বড় বিচলিত করিয়াছে। তোমাকে যে যত্ন করিতে পাইলাম না—”
দরবিগলিত অশ্রুরাশি যোগেন্দ্রের শীর্ণ বক্ষে ঝরিয়া পড়িল। মাধবী তাহা মুছাইয়া দিয়া বলিয়াছিল, “আবার যখন তোমার পায়ে গিয়া পড়িব, তখন যত্ন করিয়ো—”
যোগেন্দ্রনাথ বলিয়াছিলেন, “মাধবি, যে জীবন তুমি আমার সুখের জন্য সমর্পণ করিতে, সেই জীবন সকলের সুখে সমর্পণ করিও। যার মুখ ক্লিষ্ট মলিন দেখিবে, তাহারই মুখ প্রফুল্ল করিতে চেষ্টা করিও— আর কি বলিব, মাধবি—” আবার উচ্ছ্বসিত অশ্রু ঝরিয়া পড়িল— মাধবী তাহা মুছাইয়া দিল।
“সৎপথে থাকিও— তোমার পুণ্যে আবার তোমাকে পাইব।”
সেই অবধি মাধবী একেবারে বদলাইয়া গিয়াছে। ক্রোধ,