পাতা:বড়দিদি-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বড়দিদি
১৮


থাকিত না; সে আপনার পাঁচখানা কাপড় পাঠাইয়া দিয়া, উপরের গবাক্ষ হইতে দেখিত— চারি-পাঁচজন দুঃখী লোক কলরব করিতে করিতে ফিরিয়া যাইতেছে— তাহারাই বস্ত্রলাভ করিয়াছে!

 সুরেন্দ্রনাথের এই ছোট-খাট আবেদন-অত্যাচার নিত্যই মাধবীকে সহ্য করিতে হইত। ক্রমশঃ এ সকল এরূপ অভ্যাস হইয়া গেল যে মাধবীর আর মনে হইত না, একটা নূতন জীব তাহার সংসারে আসিয়া দৈনন্দিন কার্য্য-কলাপের মাঝখানটিতে নূতন রকমের ছোট-খাট উপদ্রব তুলিয়াছে।

 শুধু তাহাই নহে। এই নূতন জীবটির জন্য মাধবীকে আজকাল খুবই সতর্ক থাকিতে হয়, বড় বেশী খোঁজ লইতে হয়। সে যদি সব জিনিস চাহিয়া লইত, তাহা হইলেও মাধবীর অর্দ্ধেক পরিশ্রম কমিয়া যাইত; সে যে নিজের কোন জিনিসই চাহে না— এইটিই বড় ভাবনার কথা। প্রথমে সে জানিতে পারে নাই যে, সুরেন্দ্রনাথ নিতান্ত অন্যমনস্ক প্রকৃতির লোক! প্রাতঃকালে চা ঠাণ্ডা হইয়া যায়, সে হয় ত খায় না! জলখাবার হয়ত স্পর্শ করিতেও তাহার মনে থাকে না, হয় ত বা কুকুরের মুখে তুলিয়া দিয়া সে চলিয়া যায়। খাইতে বসিয়া অন্ন-ব্যঞ্জনের সে কোন সম্মানই রাখে না, পাশে ঠেলিয়া নীচে ফেলিয়া সরাইয়া রাখিয়া যায়; যেন কোন দ্রব্যই তাহার মনে ধরে না! ভৃত্যেরা আসিয়া কহে, “মাষ্টারবাবু পাগলা, কিছু দেখে না, কিছু জানে না— বই নিয়েই ব'সে আছে।”

 ব্রজবাবু মধ্যে মধ্যে জিজ্ঞাসা করেন, চাকরির কোনরূপ সুবিধা হইতেছে কি না! সুরেন্দ্র সে কথার ভাসা ভাসা উত্তর দেয়। মাধবী পিতার নিকট সে সব শুনিতে পায়, সে-ই কেবল বুঝিতে