“তা কি বলে দিতে হবে বোন্?– আমি সব বুঝেছি!”
এই ছয় মাস ধরিয়া যে কথা মাধবী প্রাণপণে লুকাইয়া আসিতেছিল, মনোরমার কাছে আর তাহা লুকাইতে পারিল না। ধরা পড়িয়া মুখ লুকাইয়া কাঁদিতে লাগিল, বড় ছেলে-মানুষের মত কাঁদিল।
শেষকালে মনোরমা বলিল, “কিন্তু গেল কেন?”
“আমি যেতে ব’লেছিলাম।”
“বেশ ক’রেছিলে— বুদ্ধিমতীর মত কাজ ক’রেছিলে।”
মাধবী বুঝিল, মনোরমা কিছুই বোঝে নাই— তাই একে একে সব কথা বুঝাইয়া কহিল। তাহার পর বলিল, “কিন্তু তিনি যদি না বাঁচ্তেন, তা’ হলে বোধ হয় পাগল হ’য়ে যেতাম।” মনোরমা মনে মনে কহিল,— “এখনই বা তার কম কি?”
সেদিন বড় দুঃখিত হইয়া সে বাড়ি চলিয়া গেল। সেই রাত্রেই— কাগজ কলম লইয়া স্বামীকে পত্র লিখিতে বসিল—
“তুমি ঠিক বলিতে— স্ত্রীলোককে বিশ্বাস নাই! আমিও আজ তাহাই বলিতেছি, কেন না মাধবী আমাকে শিখাইয়াছে। আমি তাহাকে বাল্যকাল হইতে জানি, তাই তাহাকে দোষ দিতে ইচ্ছা হয় না, সাহস হয় না; সমস্ত স্ত্রীজাতিকে দোষ দিই— বিধাতাকে দোষ দিই— তিনি কিজন্য এত কোমল, এই জলের মত তরল পদার্থ দিয়া নারীর হৃদয় গড়িয়াছিলেন? এত ভালবাসা ঢালিয়া দিয়া এ হৃদয় কে গড়িতে সাধিয়াছিল? তাঁহার চরণে প্রার্থনা, যেন এ হৃদয়গুলা একটু শক্ত করিয়া নির্ম্মাণ করা হয়;— আর তোমার চরণে প্রার্থনা, যেন ঐ পায়ে মাথা রাখিয়া ঐ মুখপানে চাহিয়া মরিতে