তাহার পর, তাহার জীবনে এক নূতন ঘটনা ঘটিল। ঘটনা যদিও নূতন, কিন্তু নিতান্ত স্বাভাবিক। সুরেন্দ্রের পিতা রায়মহাশয় ইহা বহুদিন হইতে জানিতেন এবং আশা করিতেন। সুরেন্দ্রের মাতামহ পাবনা-জেলার একজন মধ্যবিত্ত জমিদার। কুড়ি পঁচিশখানি গ্রামে জমিদারি; বাৎসরিক আয় প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা হইবে। একে তিনি অপুত্রক, খরচ-পত্র স্বভাবতঃ কম, তাহাতে তিনি একজন প্রসিদ্ধ কৃপণ ছিলেন। তাই তাঁহার সুদীর্ঘ জীবনের বহু অর্থ সঞ্চিত করিতে পারিয়াছিলেন। তাঁহার অবর্ত্তমানে সমস্ত বৈভব একমাত্র দৌহিত্র সুরেন্দ্রনাথ পাইবে, রায়মহাশয় ইহা স্থির জানিতেন। তাহাই হইল। রায়মহাশয় সংবাদ পাইলেন, শ্বশুর মহাশয় আসন্ন মৃত্যুশয্যায় শয়ন করিয়াছেন! তাড়াতাড়ি পুত্রকে লইয়া পাবনা যাত্রা করিলেন। কিন্তু পৌঁছিবার পূর্ব্বেই, শ্বশুর মহাশয় পরলোক গমন করিলেন।
সমারোহ করিয়া শ্রাদ্ধ-শান্তি হইল। শৃঙ্খলিত জমিদারিতে আরো শৃঙ্খলার ঘটা পড়িয়া গেল। পরিপক্ব-বুদ্ধি প্রাচীন উকীল রায়-মহাশয়ের কড়া বন্দোবস্তে, প্রজারা সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিল। এখন সুরেন্দ্রের বিবাহ হওয়া আবশ্যক। ঘটকের আনাগোনায় গ্রামময় আন্দোলন পড়িয়া গেল। পঞ্চাশ ক্রোশের মধ্যে যে বাড়ীতে একটী সুন্দরী কন্যা ছিল, সেই বাড়ীতেই ঘটকের দল, ঘন ঘন পদধূলি দিয়া, পিতা-মাতাকে আপ্যায়িত ও আশান্বিত করিতে লাগিল,– এমনভাবে দুই মাস ছয় মাস অতিবাহিত হইল।
অবশেষে বিমাতা আসিলেন; তাঁহার সর্ম্পকের যে কেহ ছিল, সেও আসিল– বন্ধুবান্ধবে গৃহ পুরিয়া গেল।