এই আট দশ বছর ধরিয়া জমিদারের খাজনা না দিলে জমি-জায়গা কিরূপে থাকা সম্ভব?
মাধবী কহিল, “জমির কিছু কি উপস্বত্ব হইত না যে, এই কয়টা টাকা খাজনা দেওয়া হয় নাই? আর যদি যথার্থই বিক্রয় হইয়া থাকে, তাহা হইলে সে কে বিক্রয় করিয়াছে, এবং এখন কাহার নিকট আছে, সংবাদ পাইলে উদ্ধার করিবার চেষ্টা করা যায়। কাগজ পত্রই বা কোথায়?” চাটুয্যে মহাশয় অবশ্য কিছু জবাব দিয়াছিলেন, কিন্তু মাধবী তাহা বুঝিতে পারিল না। ব্রাহ্মণ বিড়বিড় করিয়া কত কি বকিলেন, তাহার পর ছাতা মাথায় দিয়া, নামাবলি কোমরে জড়াইয়া, একখানা থান-কাপড় গামছায় বাঁধিয়া লইয়া, জমিদার-বাবুর কাছারি লাল্তা-গাঁ অভিমুখে রওনা হইলেন। এই লাল্তা-গ্রামে সুরেন্দ্রনাথের বাটী এবং ম্যানেজার মথুরবাবুর কাছারি। ব্রাহ্মণ আট-দশ ক্রোশ বরাবর হাঁটিয়া একেবারে মথুরবাবুর নিকট উপস্থিত হইয়া কাঁদিয়া পড়িলেন, “দোহাই বাবা, গরীব ব্রাহ্মণকে বুঝি পথে পথে ভিক্ষে ক’রে খেতে হয়।”
এমন ত অনেক আইসে! মথুরবাবু মুখ ফিরাইয়া বলিলেন, “হয়েছে কি?” “বাবা, রক্ষে কর।” “কি হয়েছে তোমার?”
বিধু চাটুয্যে তখন মাধবী-দত্ত একশত টাকা দক্ষিণা হাতে গুঁজিয়া বলিলেন, “আপনি ধর্ম্মাবতার, আপনি না রক্ষা কর্লে আমার সর্ব্বস্ব যায়।” “আচ্ছা, খুলে বল!”
“গোলাগাঁয়ের রামতনু সান্যালের বিধবা পুত্রবধূ কোথা থেকে এতদিন পরে ফিরে এসে, আমার সমস্ত দখল কর্তে চায়।”