পিরানের উপর পড়িল; সুরেন্দ্রনাথ হাত দিয়া মুখ মুছিয়া ফেলিলেন। একটার পূর্ব্বেই গোলাগাঁয়ে উপস্থিত হইলেন। পথের ধারে দোকানে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই গোলাগাঁ?” “হাঁ।” “রামতনু সান্যালের বাটী কোথায়?”– “ঐ দিকে–”
আবার ঘোড়া ছুটিল। অল্পক্ষণে বাঞ্ছিত বাটীর সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল।
দ্বারেই একজন সিপাহী বসিয়াছিল; প্রভুকে দেখিয়া সে প্রণাম করিল।
“বাটীতে কে আছেন?” “কেউ না।” “কেউ না? কোথায় গেলেন?” “ভোরেই নৌকা করে চলে গেচেন।” “কোথায়– কোন্ পথে?” “দক্ষিণ দিকে–” “নদীর ধারে-ধারে পথ আছে? ঘোড়া দৌড়তে পার্বে?” “বলতে পারি না। বোধ হয় নেই।”
পুনর্ব্বার ঘোড়া ছুটিয়া চলিল। ক্রোশ দুই আসিয়া আর পথ নাই। ঘোড়া চলে না। ঘোড়া ছাড়িয়া দিয়া তখন সুরেন্দ্রনাথ পদব্রজে চলিলেন। একবার চাহিয়া দেখিলেন– জামার উপর অনেক ফোঁটা রক্ত ধূলায় জমিয়া গিয়াছে। ওষ্ঠ বাহিয়া তখনও রক্ত পড়িতেছে। নদীতে নামিয়া অঞ্জলি ভরিয়া জল পান করিলেন– তার পর প্রাণপণে ছুটিয়া চলিলেন। পায়ে আর জুতা নাই– সর্ব্বাঙ্গে কাদা, মাঝে মাঝে শোণিতের দাগ! বুকের উপর কে যেন রক্ত ছিটাইয়া দিয়াছে।
বেলা পড়িয়া আসিল। পা আর চলে না– যেন এইবার শুইতে পারিলেই জন্মের মত ঘুমাইয়া পড়িবে– তাই যেন অন্তিম-শয্যায় এই জীবনের মহা-বিশ্রামের আশায় সে উন্মত্তের মত ছুটিয়া চলিয়াছে।