“মা ঠাক্রুন, চাঁদনি রাত; ভোর নাগাদ পৌঁছে দেব।”
সন্ধ্যার পরে সুরেন্দ্রনাথের জ্ঞান হইল। চক্ষু মেলিয়া সে মাধবীর মুখপানে চাহিয়া রহিল। মাধবীর মুখে এখন অবগুণ্ঠন নাই, শুধু কপালের কিয়দংশ অঞ্চলে ঢাকা। ক্রোড়ের উপর সুরেন্দ্রের মাথা লইয়া মাধবী বসিয়াছিল।
কিছুক্ষণ চাহিয়া সুরেন্দ্র কহিল, “তুমি বড়দিদি?”
অঞ্চল দিয়া মাধবী সযত্নে তাহার ওষ্ঠ-সংলগ্ন রক্তবিন্দু মুছাইয়া দিল, তাহার পর আপনার চোখ মুছিল।
“তুমি বড়দিদি?” “আমি মাধবী।”
সুরেন্দ্রনাথ চক্ষু মুছিয়া মৃদু মৃদু স্বরে বলিল, “আঃ, তাই!”
বিশ্বের আরাম যেন এই ক্রোড়ে লুকাইয়া ছিল। এতদিন পরে সুরেন্দ্রনাথ তাহা খুঁজিয়া পাইয়াছে। অধরের কোণে সরক্ত হাসিও তাই ফুটিয়া উঠিয়াছে। “বড়দিদি, যে কষ্ট।”
তর্ তর্ ছল্ ছল্ করিয়া নৌকা ছুটিয়াছে। ছইয়ের ভিতর সুরেন্দ্রর মুখের উপর চাঁদের কিরণ পড়িয়াছে। নয়নতারার মা একটা ভাঙ্গা পাখা লইয়া মৃদু মৃদু বাতাস করিতেছে। সুরেন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে কহিল, “কোথায় যাচ্ছিলে?”
মাধবী ভগ্নকণ্ঠে কহিল, “প্রমীলার শ্বশুরবাড়ি।”
“ছিঃ, এমন করে কি কুটুমের বাড়ি যেতে আছে, দিদি?”