পাতা:বনবাণী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গ্রন্থপরিচয়: নবীন

 পথিক চলে গেল সুদূরের বাণীকে জাগিয়ে দিয়ে। এমনি করে কাছের বন্ধনকে বারে বারে সে আলগা করে দেয়। একটা কোন্‌ অপরিচিত ঠিকানার উদ্দেশ বুকের ভিতর রেখে দিয়ে যায়; জানলায় বসে দেখতে পাই, তার পথ মিলিয়ে গেছে বনরাজিনীল দিগন্তরেথার ও পারে। বিচ্ছেদের ডাক শুনতে পাই কোন্‌ নীলিমকুহেলিকার প্রাস্ত থেকে, উদাস হয়ে যায় মন— কিন্তু, সেই বিচ্ছেদের বাঁশিতে মিলনেরই সুর তো বাজে করুণ সাহানায়।

বাজে করুণ সুরে,  হায় দূরে

 এই খেলা-ভাঙার খেলা বীরের খেলা। শেষ পর্যস্ত যে ভঙ্গ দিল না তারই জয়। বাঁধন ছিঁড়ে যে চলে যেতে পারল, পথিকের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল পথে, তারই জন্যে জয়ের মালা। পিছনে ফিরে ভাঙা খেলনার টুকরো কুডোতে গেল যে কৃপণ তার খেলা পুরো হল না— খেলা তাকে মুক্তি দিল না, খেলা তাকে বেঁধে রাখলে। এবার তবে ধুলোর সঞ্চয় চুকিয়ে দিয়ে হালকা হয়ে বেরিয়ে পড়ো।

বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা[১]

 এবার প্রলয়ের মধ্যে পূর্ণ হোক্‌ লীলা; সমে এসে সব তান মিলুক, শান্তি হোক্, মুক্তি হোক্।

ওরে পথিক, ওরে প্রেমিক[২]


[শান্তিনিকেতন]
৩০ ফাল্গুন ১৩৩৭
১৩
  1. দ্রষ্টব্য: ফাল্গুনী
  2. দ্রষ্টব্য; বসন্ত।