পাতা:বনবাণী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বনবাণী

বহ্নিবাষ্পসরোবরে ঊর্মি জাগে প্রচণ্ড চঞ্চল,
অতল আবর্তক্ষে গ্রহনক্ষত্রের শতদল
প্রস্ফুটিয়া স্ফুরে নিত্যকাল, ধূমকেতু অকস্মাৎ
উড়ায় উত্তরী হাস্যবেগে, করে ক্ষিপ্র পদপাত
তোমার ডম্বরুতালে, পূজানৃত্য করি দেয় সারা
সূর্যের মন্দির-সিংহদ্বারে, চলে যায় লক্ষ্যহারা
গৃহশূন্য পান্থ উদাসীন।


নটরাজ, আমি তব
কবিশিষ্য, নাটের অঙ্গনে তব মুক্তিমন্ত্র সব।
তোমার তাণ্ডবতালে কর্মের বন্ধনগ্রন্থিগুলি
ছন্দোবেগে স্পন্দমান পাকে পাকে সদ্য যাবে খুলি।
সর্ব অমঙ্গলসর্প হীনদর্প অবনম্র ফণা
আন্দোলিবে শান্ত লয়ে।


প্রভু, এই আমার বন্দনা
নৃত্যগানে অর্পিব চরণতলে, তুমি মোর গুরু-
আজিকে আনন্দে ভয়ে বক্ষ মোর করে দুরুদুরু।
পূর্ণচন্দ্রে লিপি তব, হে পূর্ণ, পাঠালে নিমন্ত্রণে
বসন্তদোলের নৃত্যে, দক্ষিণবায়ুর আলিঙ্গনে,
মল্লিকার গন্ধোল্লাসে, কিংশুকের দীপ্ত রক্তাংশুকে,
বকুলের মত্ততায়, অশোকের দোদুল কৌতুকে,
বেণুবনবীথিকার নিরন্তর মর্মরে কম্পনে
ইঙ্গিতে ভঙ্গিতে, আম্রমঞ্জরীর সর্বত্যাগপণে,
পলাশের গরিমায়। অবসাদে যেন অন্যমনে

৬৪