পাতা:বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাশ.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অন্ধকার

গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার;
তাকিয়ে দেখলাম পাণ্ডুর চাঁদ বৈতরণীর থেকে তার অর্ধেক ছায়া
গুটিয়ে নিয়েছে যেন কীর্তিনাশার দিকে।
ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়েছিলাম—পউষের রাতে
কোনােদিন আর জাগব না জেনে
কোনাে দিন জাগব না আমি—কোনােদিন জাগব না আর
হে নীল কস্তুরী আভার চাঁদ,
তুমি দিনের আলাে নও, উদ্যম নও, স্বপ্ন নও,
হৃদয়ে যে মৃত্যুর শান্তি ও স্থিরতা রয়েছে।
রয়েছে যে অগাধ ঘুম
সে আস্বাদ নষ্ট করবার মতাে শেলতীব্রতা তােমার নেই,
তুমি প্রদাহ প্রবহমান যন্ত্রণা নও—
জানাে না কি চাঁদ,
নীল কস্তুরী আভার চাঁদ,
জানাে না কি নিশীথ,
আমি অনেক দিন
অনেক অনেক দিন
অন্ধকারের সারাৎসারে অনন্ত মৃত্যুর মত মিশে থেকে
হঠাৎ ভােরের আলাের মূখ উচ্ছাসে নিজেকে পৃথিবীর জীব
বুঝতে পেরেছি আবার;

ভয় পেয়েছি,
পেয়েছি অসীম দুর্নিবার বেদনা;
দেখেছি রক্তিম আকাশে সূর্য জেগে উঠে
মানুষিক সৈনিক সেজে পৃথিবীর মুখখামুখি দাঁড়াবার জন্য
আমাকে নির্দেশ দিয়েছে;

২৬