পাতা:বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাশ.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার সমস্ত হৃদয় ঘৃণায়-বেদনায়—আক্রোশে ভরে গিয়েছে;
সূর্যের রৌদ্রে আক্রান্ত এই পৃথিবী যেন কোটি কোটি শুয়ােরের
আর্তনাদে উৎসব শুরু করেছে।
হায়, উৎসব!
হৃদয়ের অবিরল অন্ধকারের ভিতর সূর্যকে ডুবিয়ে ফেলে
আবার ঘুমােতে চেয়েছি আমি,
অন্ধকারের স্তনের ভিতর যােনির ভিতর অনন্ত মৃত্যুর মতাে মিশে
থাকতে চেয়েছি।

কোনােদিন মানুষ ছিলাম না আমি।
হে নর, হে নারী,
তােমাদের পৃথিবীকে চিনিনি কোনােদিন;
আমি অন্য কোনাে নক্ষত্রের জীব নই।
যেখানে স্পন্দন, সংঘর্ষ, গতি, যেখানে উদ্যম, চিন্তা, কাজ,
সেখানেই সূর্য, পৃথিবী, বৃহস্পতি, কালপুরুষ, অনন্ত আকাশগ্রন্থি,
শত শত শূকরের চীৎকার সেখানে,
শত শত শূকরীর প্রসববেদনার আড়ম্বর;
এই সব ভয়াবহ আরতি।

গভীর অন্ধকারে ঘুমের আস্বাদে আমার আত্মা লালিত;
আমাকে কেন জাগাতে চাও?
হে সময়গ্রন্থি, হে সূর্য, হে মাঘনিশীথের কোকিল, হে স্মৃতি,
হে হিম হাওয়া,
আমাকে জাগাতে চাও কেন!

অরব অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠব না আর;
তাকিয়ে দেখব না নির্জন বিমিশ্র চাদ বৈতরণীর থেকে
অর্ধেক ছায়া গুটিয়ে নিয়েছে কীর্তিনাশার দিকে।

২৭