পাতা:বনে পাহাড়ে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बन-श्रांश স্নানপৰ্ব্ব সমাধা করলাম। অল্প কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পর দেখা গেল বনের মধ্যে ছায়া পড়ে আসচে। চারিদিকেই বড় বড় শৈলচুড়া, জায়গাটাতে তাড়াতাড়ি ছায়া নেমে আসে। বনের মধ্যে সেই ঝর্ণার কাছে গিয়ে আমরা সবাই বসলুম সেই অপরাহুে। এর নাম দিয়েচে এর মাছের বঁাধ। বনবিভাগ থেকে একটা বঁধ মত গেথে দিয়েচে বেগবতী পাৰ্ব্বত্য স্রোতস্বিনীর বুকে। তাতে তার গতিরোধ হয়নি, আরও দ্বিগুণ উচ্ছাসে আবেগে কংক্রিটের বাঁধ ডিঙিয়ে এপারে কঁাপিয়ে পড়চে । এই স্থানটি এত সুন্দর, একবার বসলে উঠে আসতে ইচ্ছেই করবে না । এর সামনের দিকে সুউচ্চ পাহাড়, তার ঢালুতে বড় বড় শালগাছের বন, এখানে বসে শুধুই দেখা যায় শাল গাছের গুড়িগুলো নিচে থেকে ভিড় করে ওপরের দিকে উঠে উঠে কোথায় যেন মিলিয়ে গিয়েছে। আমাদের ডানদিকে চওড়া মোটর-রোড বনবিভাগের নিৰ্ম্মিত, কিন্তু এ পথে মোটর অপেক্ষা বাঘ ভালুকের যাতায়াত বেশি। যখন কনট্রাক্টরের দল বনের মধ্যে থেকে কাঠ কাটিয়ে নিয়ে যায়, তখন বছরের মধ্যে দিন কয়েক ওদের মোটরালরি বা মোটর যাতায়াত করে--কাচিৎ বন-বিভাগের উচ্চ কৰ্ম্মচারী মোটরে সফর করতে আসেন-মিটে গেল। সারা বছরে এ পথে আর লোকজন বড় বেশি যাতায়াত করে না । মোটরগাড়ী তো দূরের কথা। অতিরিক্ত নির্জন স্থান। চেয়ে চেয়ে দেখলুম, একটা লোক কোন দিকে চােখে পড়ে না- শুধু যা আমরাই আছি। ঋষিদের তপোবন এমনি নির্জন জায়গাতেই ছিল। ভারতের সভ্যতার জন্মস্থান এই বনানী, এখানেই বেদ, উপনিষদ, বেদান্তের জন্ম হয়েছিল-হৈ হট্টগোল যুক্ত সহরের বুকে নয়। পাশের পথ বেয়ে দুজন লোক পুটলি কঁাধে কোথায় চলেছে। তাদের ডাকা হোল হো ভাষায়, অবিশ্যি আমি ডাকিনি। আমি মিঃ সিংহকে বল্লুম-জিগ্যেস করুন ওরা কোথায় যাচ্ছে।