পাতা:বনে পাহাড়ে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনে-পাহাড়ে R অন্য একটা রাস্তা বেরিয়েছে ময়ূরভঞ্জের বাঙ্গিপোস নামক জায়গায়। সে রাস্তায় বেঁকে গেলে কি হয় বলা যায় না-হয়তো বম্বে যেতে পারে। সে রকম দেখতে গেলে তো যে কোনো রাস্তা দিয়েই বম্বে যাওয়া যায় । যে কোনো জেলার যে কোনো রাস্তাকে তবে বম্বে রোড কেন বলা হবে না ? চিরকাল পথে পথে বেড়িয়ে অভ্যোস দাড়িয়ে গিয়েছে খারাপ । পথ যেন ডাকে, হাতছানি দেয়। সেদিন ছিল অষ্টমী তিথি । সন্ধ্যার পরেই কি চমৎকার জ্যোৎসু উঠলো। ঝাড়গ্রামে আমার এক আত্মীয়-বাড়ীতে গিয়ে দিন দুই আছি- হঠাৎ ইচ্ছে হোল এমন জ্যোৎস্নায় একটুখানি বেড়িয়ে আসি। জায়গাটা রাজবাড়ীর পাশে-পুরোনো ঝাড়গ্রাম। ষ্টেশনের কাছে হয়েছে নতুন কলোনি, কলকাতার অনেক ভদ্রলোক বাড়ী করেছেন সেখানে, কিন্তু পুরোনো ঝাড়গ্রামের একটি নিজস্ব সৌন্দৰ্য্য আছে। এখানে পুরোনো দিনের রাজাদের গড়খাই ও দুর্গ প্রাচীরের চিহ্ন আজও দেখা যায়, আর আছে শালবন, আগাছার জঙ্গল, পুরোনো দেউল, দীঘি। দিব্যি রোম্যান্টিক পরিবেশ। পুরোনো দীঘির ধারে হাট বসে, তার আগে সাবিত্ৰী-মন্দির । সাবিত্ৰী-মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেল গ্রামের বাইরে মাঠ ও বনের দিকে। একাই চলেছি, শালবনে কচি পাতা গজিয়েছে, কুসুম-গাছের রঙিন কচি পাতার সম্ভার দূর থেকে ফুল বলে ভুল হয়। গ্রাম ছাড়িয়ে পায়ে-চলা মাঠের পথ শালবনের মধ্যে দিয়ে দূর থেকে দূরান্তরে অদৃশ্য হয়েছে-সুড়ি পথের দু’ধারে শালবন । একাই চলেছি। এ পথে কখনো আসিনি, কোথায় কি আছে জানিনে। ভালুক বেরুবে না তো ? শুকনো শালপাতার ওপরে খসখস শব্দ হোলেই ভাবছি। এইবার বোধ হয় ভালুকের দর্শন লাভ ঘটলো। আরও এগিয়ে চলেছি-একটা ছোট্ট পাহাড়ী নদী