পাতা:বনে পাহাড়ে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ta-tetcy বল্পেন-চলুন, এ গ্রামে যেখানে রাত্রি যাপন করেছিলাম দেখিয়ে আনি । মোটর থেকে নেমে আমরা একটা পাহাড়ের ওপর উঠলাম। সেই পাহাড়ের মাথার ওপর ক্ষুদ্র একটি কুটীরের সামনে এক বৃদ্ধ লোক খামারে ধান ঝাড়চে, কুমড়োর লতা উঠেচে কুটীরের খড়ে-ছাওয়াচালের ওপর ; কুটীরের দাওয়া থেকে সম্মুখের সারান্দি-বনকান্তারের শৈল-শ্রেণীর গম্ভীর দৃশ্য হিমালয়ের পার্বত্যভূমির সৌন্দৰ্য্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । হিংসে হোল বৃদ্ধ ব্যক্তিটির ওপর, এমন সুন্দর জায়গায় ওর বাড়ী । মিঃ সিংহ তাকে বল্লেন-কি জাত ? লোকটা বল্লে-গোসাই । অর্থাৎ ব্ৰাহ্মণ । এ দেশে ব্ৰাহ্মণকে বলে “গোসাই’ । এতক্ষণ লক্ষ্য করিনি। ওর গলায় মলিন পৈতে বুলচে বটে। সে পাহাড় থেকে আমরা ওপারের সমতলভূমিতে নেমে আসল গ্রামে পৌঁছুলাম । গ্রামের প্রান্তে একটা ভাঙা কুঁড়েঘর দেখিয়ে মিঃ সিংহ বল্পেনএই ঘরে সেদিন রাত কাটিয়েছিলাম । কুটীরটির চারধারে বড় বড় শালগাছ, একটু দূরে একটা কালো পাথরের ডুংরি অর্থাৎ ক্ষুদ্র পাহাড়। সে পাহাড়ের উপর শালগাছের সঙ্গে লতা পলাশের (Buteasuperba) জড়াজড়ি। বসন্তকালে রক্ত পলাশের মেলা যখন সুরু হয়ে যাবে বনে বনে, তখন যে কোনো কবি, সাহিত্যিক, ভাবুকের পক্ষে কিংবা ভগবানের চিন্তায় মগ্ন সাধুর পক্ষে এই নিভৃতি বনকুঞ্জবন্ত্ৰী কুটীরটি অতি লোভনীয় হবে সন্দেহ নেই। কোল-বোংসা গ্ৰামে বাস করে হো জাতীয় অধিবাসীরা, ঘরদোর তাদের অত্যন্ত খারাপ-নিতান্ত দীনহীন, কিন্তু তারা এক রমণীয় পার্বত্য দৃশ্যের মধ্যে সর্বদা থাকে, ওদের কুটীরের দাওয়ায় বসলে নীল শৈলমালা ও - বনকান্তারের কি শোভন রূপটিই চোখের সামনে