পাতা:বন-ফুল - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
বন-ফুল।

নয়নে সলিল ঝরে, বালিকা সমুচ্চ স্বরে।
বিষাদে ব্যাকুল হৃদে কহে “পিতা—পিতা”
কে দিবে উত্তর তোর, প্রতিধ্বনি শোকে ভোর
রোদন করিছে সে ও বিষাদে তাপিতা।
ধরিয়া পিতার গলে, আবার বালিকা বলে
উচ্চৈস্বরে “পিতা-পিতা” উত্তর না পায়।
তরুণী পিতার বুকে, বাহুতে ঢাকিয়া মুখে।
অবিরল নেত্র জলে বক্ষ ভাসি যায়।
শোকানলে জল ঢালা, সাঙ্গ হ’লে উঠে বালা
শূন্য মনে উঠি বসে আঁখি অশ্রুময়!
বসিয়া বালিকা পরে, নিরখি পথিকবরে
সজল নয়ন মুছি ধীরে ধীরে কয়,—
“কে তুমি জিজ্ঞাসা করি, কুটীরে এলে কি করি
আমি যে পিতারে ছাড়া জানিনা কাহারে।
পিতার পৃথিবী এই, কোন দিন কাহাকেই
দেখিনি ত এখানে এ কুটীরের দ্বারে।
কোথাহ’তে তুমি আজ, আইলে পৃথিবীমাঝ?
কি ব’লে তোমারে আমি করি সম্বোধন?
তুমি কি তাহাই হবে, পিতা যাহাদের সবে,
মানুষ বলিয়া আহা করিত রোদন?