পাতা:বরেন্দ্র রন্ধন.djvu/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম অধ্যায়—ঘণ্ট।
১৪৯

রুই অথবা ইলিশ যে কোন মাছের সহিত রাঁধা যাইতে পারে। আবার লাউ, বিলাতী কুমড়া, শশা, ফুল কোবি, বাঁধা কোবি, স্কোয়াস প্রভৃতির সহিত কাঁকড়া বা চিংড়ী মাছের ঘণ্ট রাঁধিলে চমৎকার হয়। আবার পালঙ শাকের ঘণ্টে কই বা শোল মাছের মুড়া-কাঁটা ভাল মজে।

 রুই মাছের মুড়া, কাঁটা, গাদা প্রভৃতি লইয়া নুণ হলুদ মাখিয়া কষাইয়া বাথ। লাউ সরু সরু করিয়া কুটিয়া লও। (কিছু বিলাতী কুমড়া সরু সরু করিয়া কুটিয়া লাউর সহিত মিশাইয়া ঘণ্ট রাঁধিলে লাউর ঘণ্ট মজে ভাল। কিন্তু তৎক্ষেত্রে দুটো কালজিরা ফোড়ন দিতে হইবে।) তৈলে জিরা, তেজপাত, ও লঙ্কা ফোড়ন দিয়া লাউ ছাড়। উত্তমরূপে আংসাও। নুণ, হলুদ ও সর্ব্বপ্রকার বাটনা (অর্থাৎ ধনিয়া বাটাও মিশাইতে হইবে) মিশাও। কেহ কেহ পূর্ব্বে লঙ্কা বাটা ও ধনিয়া বাটা মিশাইয়া একটু আংসাইয়া লইয়া জল দিয়া ব্যঞ্জন সিদ্ধ করতঃ পরে জিরা-গোলমরিচ বাটা ও তেজপাত বাটা মিশাইয়া থাকেন। এবং তাহাই সমীচীন। জল ফুটিলে কষান মাছ ছাড়িবে। সুসিদ্ধ হইলে মাছ ভাঙ্গিয়া সমস্ত ঘাঁটিয়া মিশাইয়া দিবে, পশ্চাৎ পিঠালী দিয়া উত্তম রূপে নাড়িয়া চাড়িয়া সমস্ত আঁটিয়া লইয়া বেশ নসনসে গোছ করিয়া নামাইবে।

 কাৎলা, কালবাউসাদি, আইড়াদি, কাঁকড়া ও চিংড়ী মাছের সহিত লাউর ঘণ্ট এই প্রকারে রাঁধিবে। কিন্তু ইলিশ মাছের সহিত লাউর ঘণ্ট রাঁধিবে না, রাঁধিলে তাহা আদৌ মজিবে না। মাছের ঘণ্ট মাত্রেই গরম গরম খাইতে ভাল, নচেৎ আঁষটে গন্ধ বিশিষ্ট হইবে। বিবাহ আদি ব্যাপারে লাউর সহিত রুই মাছের মুড়া-কাঁটা-গাদার ঘণ্ট, ‘ভোজনে’ অন্নের সহিত পরিবেশন করা বরেন্দ্রের একটি প্রাচীন প্রথা।

 শৈল মাছের মুড়া-কাঁটা দিয়াও লাউ প্রভৃতির সুন্দর ঘণ্ট হয়। বাঁধাকোবির আমিষ ঘণ্ট এই প্রকারে রাঁধিবে। ফুল কোরি, স্কোয়াস, ওল কোবি প্রভৃতির ঘণ্টও রুই মাছের মুড়া-কাঁটা-গাদা যোগে এই একারে রাঁধিবে।