পাতা:বহুবিবাহ.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ।
১৩

বিবাহ করিয়াছিলেন, কোনও ক্রমে এরূপ প্রতীতি জন্মে না। রামায়ণে যেরূপ নির্দিষ্ট আছে, তদনুসারে তিনি বৃদ্ধ বয়স পর্য্যন্ত পুত্র- মুখ নিরীক্ষণে অধিকারী হয়েন নাই। ইহা নিশ্চিত বোধ হইতেছে, তাঁহার প্রথমপরিণীতা স্ত্রী বন্ধ্যা বলিয়া পরিগণিত হইলে, তিনি দ্বিতীয় বার বিবাহ করেন; এবং সে স্ত্রীও পুত্র প্রসব না করাতে, তাঁহারও বন্ধ্যাত্ব বোধে, রাজা পুনরায় বিবাহ করিয়াছিলেন। এইরূপে ক্রমে ক্রমে তাঁহার অনেক বিবাহ ঘটে। অবশেষে, চরম বয়সে, কৌশল্যা, কেকয়ী, সুমিত্রা, এই তিন মহিষীর গর্ভে তাঁহার চারি সন্তান জন্মে। সুতরাং, রাজা দশরথের বহু বিবাহ পূর্ব্ব পূর্ব্ব স্ত্রীর বন্ধ্যাত্বশঙ্কা নিবন্ধন ঘটিয়াছিল, স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতেছে। দশরথ যে কারণে বহু বিবাহ করিয়াছিলেন, অন্যান্য রাজারও সেই কারণে, অথবা শাস্ত্রোক্ত অন্য কোনও নিমিত্তবশতঃ, একাধিক বিবাহ করেন, তাহার সংশয় নাই। তবে, ইহাও লক্ষিত হইতে পারে, কোনও কোনও রাজা, যদৃচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া, বহু বিবাহ করিয়াছিলেন। কিন্তু, সেই দৃষ্টান্ত দর্শনে বহুবিবাহকাণ্ড শাস্ত্রানুমত ব্যাপার বলিয়া প্রতিপন্ন হইতে পারে না। রাজার আচার সর্ব্বসাধারণ লোকের পক্ষে আদর্শস্বরূপে পরিগৃহীত হওয়া উচিত নহে। ভারতবর্ষীয় রাজাৱা স্ব স্ব অধিকারে এক প্রকার সর্ব্বশক্তিমান্ ছিলেন। প্রজারা ধর্ম্মশাস্ত্রের ব্যবস্থা অতিক্রম করিয়া চলিলে, রাজা দণ্ডবিধানপূর্ব্বক তাহাদিগকে ন্যায়পথে অবস্থাপিত করিতেন। কিন্তু, রাজারা উৎপথপ্রতিপন্ন হইলে, তাঁহাদিগকে ন্যায়পথে প্রবর্ত্তিত করিবার লোক ছিল না। বস্তুতঃ, রাজারা সর্ব্ব বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রেচ্ছ ছিলেন। সুতরাং, যদি কোনও রাজা, উচ্ছৃঙ্খল হইয়া, শাস্ত্রোক্ত নিমিত্ত ব্যতিরেকে, যদৃচ্ছাক্রমে বহু বিবাহ করিয়া থাকেন, সর্ব্বসাধারণ লোকে, সেই দৃষ্টান্তের অনুবর্ত্তী ছইয়া, বহু বিবাহ করিলে, তাহা কোনও ক্রমে বৈধ বলিয়া প্রতিপন্ন হইতে পারে না। মনু কছিরছেন,—