পাতা:বহুবিবাহ.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ।
৪১

কুলীনভাগিনেয়ী যথাযোগ্য পাত্রে অর্পিতা না হইলে, বংশের গৌরব- হানি হয়; এজন্য, তাঁহারা, ভঙ্গকুলীনের কুলমর্য্যাদার নিয়মানুসারে, ভাগিনেয়ীদের বিবাহকার্য্য নির্ব্বাহ করেন। এই সকল কন্যারা, স্ব স্ব জননীর ন্যায় নামমাত্রে বিবাহিতা হইয়া, মাতুলালয়ে কাল- যাপন করেন।

 কুলীনভগিনী ও কুলীনভাগিনেয়ীদের বড় দুর্গতি। তাহাদিগকে, পিত্রালয়ে অথবা মাতুলালয়ে থাকিয়া, পাচিকা ও পরিচারিকা উভয়ের কর্ম্ম নির্ব্বাহ করিতে হয়। পিতা যত দিন জীবিত থাকেন, কুলীনমহিলার তত দিন নিতান্ত দুরবস্থা ঘটে না। তদীয় দেহাত্যয়ের পর, ভ্রাতারা সংসারের কর্ত্তা হইলে, তাঁহারা অতিশয় অপদস্থ হন। প্রখরা ও মুখরা ভ্রাতৃভার্য্যারা তাঁহাদের উপর, যার পর নাই, অত্যাচার করে। প্রাতঃকালে নিদ্রাভঙ্গ, রাত্রিতে নিদ্রাগমন, এ উভয়ের অন্তর্বর্ত্তী দীর্ঘ কাল, উৎকট পরিশ্রম সহকারে সংসারের সমস্ত কার্য্য নির্ব্বাহ করিয়াও, তাঁহারা সুশীলা ভ্রাতৃভার্য্যাদের নিকট প্রতিষ্ঠালাভ করিতে পারেন না। তাঁহারা সর্ব্বদাই তাঁহাদের উপর খড়্গহস্ত। তাঁহাদের অশ্রুপাতের বিশ্রাম নাই বলিলে, বোধ হয়, অত্যুক্তিদোৰে দূষিত হইতে হয় না। অনেক সময়, লাঞ্ছনা সহ্য করিতে না পারিয়া, প্রতিবেশীদিগের বাটীতে গিয়া, অশ্রুবিসর্জন করিতে করিতে, তাঁহাৱা আপন অদৃষ্টের দোষ কীর্ত্তন ও কৌলীন্যপ্রথার গুণ কীর্ত্তন করিয়া থাকেন; এবং পৃথিবীর মধ্যে কোথাও স্থান থাকিলে চলিয়া যাইতাম, আর ও বাড়ীতে মাথা গলাইতাম না, এইরূপ বলিয়া, বিলাপ ও পরিতাপ করিয়া, মনের আক্ষেপ মিটান। উত্তরসাধকের সংযোগ ঘটিলে, অনেকানেক বয়স্থা কুলীমহিলা ও কুলীনদুহিতা, যন্ত্রণাময় পিত্রালয় ও মাতুলালয় পরিত্যাগ করিয়া, বারাঙ্গনাবৃত্তিঅবলম্বন করেন।

 ফলতঃ, কুলীনমহিলা ও কুলীনতনয়াদিগের যন্ত্রণার পরিসীমা নাই। যাঁহারা কখনও তাঁহাদের অবস্থা বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন, তাঁহারাই