পাতা:বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার - দ্বিতীয় পুস্তক.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ।
১১৫

 আমার বিবেচনায় দায়ভাগকার অতি সুন্দর তৎপর্য্যব্যাখ্যা করিয়াছেন

এস্থলে বক্তব্য এই যে, প্রত্যেক বর্ণে পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগার, বার, তের প্রভৃতি স্ত্রী বিবাহ দুষ্য নয়, দায়ভাগকার পৈঠীনসিবচনের এরূপ তাৎপর্য্যব্যাখ্যা করেন নাই। তিনি সর্ব্বশাস্ত্রবত্তা তর্কবাচস্পতি মহাশয়ের মত অসংসাহসিক পুরুষ ছিলেন; সুতরাং, নিতান্ত নির্ব্ববেক হইয়া, যথেচ্ছ ব্যাখ্যা দ্বারা শাস্ত্রের গ্রীবাভঙ্গে প্রবৃত্ত হইবেন কেন। নিরপরাধ দায়ভাগকারের উপর অকারণে এরূপ দোষারোপ করা অনুচিত। তিনি যে এ বিষয়ে কোনও অংশে দোষী নহেন, তৎপ্রদর্শনার্থ তদীয় লিখন উদ্ধৃত হইতেছে।

 “চতস্রো ব্রাহ্মণস্যানুপূর্ব্ব্যোণ, তিস্রো রাজন্যস্য স্বে বৈশ্যস্য এক শূদ্রস্য। জাত্যবচ্ছেদেন চতুরাদিসংখ্যা সন্বধ্যতে।”

 (পৈঠীনসি কহিয়াছেন,) “অনুলোমক্রমে ব্রাহ্মণের চারি, ক্ষত্রিয়ের তিন, বৈশ্যের দুই, শুদ্রের এক ভার্য্যা হইতে পারে।” এই চারি প্রভৃতি সংখ্যার জাত্যবচ্ছেদেন অর্থাৎ জাতির সহিত সম্বন্ধ।

অর্থাৎ, পৈঠীনসিবচনে যে চারি, তিন, দুই, এক এই শব্দচতুষ্টয় আছে, তদ্ব্বারা চারি জাতি, তিন জাতি, দুই জাতি, এক জাতি এই বোধ করিতে হইবেক; অর্থাৎ ব্রাহ্মণ চারি জাতিতে, ক্ষত্রিয় তিন জাতিতে, বৈশ্য দুই জাতিতে, শূদ্র এক জাতিতে বিবাহ করিতে পারে; নতুবা, ব্রাহ্মণ চারি স্ত্রী বিবাহ, ক্ষত্রিয় তিন স্ত্রী বিবাহ, বৈশ্য দুই স্ত্রী বিবাহ, শূদ্র এক স্ত্রী বিবাহ করিবেক, এরূপ তাৎপর্য্য নহে। দায়ভাগকারের লিখন দ্বারা ইহার অতিরিক্ত কিছুই প্রতিপন্ন হয় না। অতএব, তদীয় এই লিখন দেখিয়া, প্রত্যেক বর্ণেও পাঁচ প্রভৃতি বিবাহ দুষ্য নয়, দায়ভাগকার এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছেন, এই ব্যাখ্যা দ্বারা ধর্মশাস্ত্রবিষয়ে পাণ্ডিত্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শিত হইয়াছে।